যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের Jadavpur University সাংবাদিকতা ও গণ জ্ঞাপন বিভাগের এক শিক্ষককে সেই বিভাগে এক যুবক গাঁদা ফুলের মালা ও পলিপ্যাকে থাকা কিছু নেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন। দৃশ্যতই ওই শিক্ষক বিব্রত। তিনি অন্য আর এক জন শিক্ষককে ডাকছেন। এমন একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি হেনস্থা নয়? এ-ও কি এক ধরনের ‘থ্রেট কালচার’ বা হুমকি-সংস্কৃতি?
সম্প্রতি ওই বিভাগের পড়ুয়াদের একাংশ অভিযোগ করেন, বিভাগের কয়েক জন শিক্ষক রাজনৈতিক রং দেখে নম্বর দেন। ফলে বেশ কয়েক জন কম নম্বর পেয়েছেন। যার প্রতিবাদে গত শুক্রবার ঘেরাও, অনশন শুরু করেন ওই পড়ুয়ারা। আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে বিভাগীয় বোর্ড অব স্টাডিজ়ের বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত হয়, চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষার রিভিউ বাইরের বিশেষজ্ঞকে রেখে করা হবে। আর ইন্টারনাল যে সব পরীক্ষা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলিও খতিয়ে দেখা হবে। বিভাগীয় এক অতিথি শিক্ষককে কারণ দর্শাতেও বলা হয়। যার পরে আন্দোলনে ইতি টানা হয়।
এর পরেই পূর্ণ সময়ের শিক্ষক সান্ত্বন চট্টোপাধ্যায় সোমবার বিভাগে এলে অন্যতম আন্দোলনকারী শ্রেয় বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাছে গাঁদা ফুলের মালা ও পলিপ্যাক নিয়ে উপস্থিত হন। সেই দৃশ্যের ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়। যা শ্রেয় ফেসবুকে পোস্ট করেন। এ দিন Jadavpur University যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতি চললে শিক্ষকেরা পরীক্ষার মূল্যায়ন করা থেকে সরে আসবেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা Jadavpur University বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক হেনস্থার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এই ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক সম্পর্কের ঐতিহ্যের পরিপন্থী। মুষ্টিমেয় ছাত্রছাত্রী সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা, ভয় প্রদর্শন-সহ যে ধরনের অপরাধমূলক ভাষা ব্যবহার করছেন, তা থ্রেট কালচারকেই প্রমোট করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাহত করে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের সুস্থ ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে বাধ্য হব।’
শ্রেয় অবশ্য এ দিনের পুরো বিষয়টিকে হেনস্থা বা হুমকি বলে মনে করছেন না। তিনি বলেন, ‘‘উনি অসুস্থ বলে শুনেছিলাম। তাই আজ উনি এলে গাঁদা ফুলের মালা, ওআরএস, গ্লুকোজ় নিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে গিয়েছিলাম। উনি মালা নেননি, কিন্তু ওআরএস, গ্লুকোজ় নিয়েছেন।’’ ঘটনাটির ভিডিয়ো করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করাকেও হেনস্থা বলে মনে করছেন না তিনি। সমাজমাধ্যমে ওই ভিডিয়োর সঙ্গে তিনি লিখেছিলেন, ‘স্যর ওআরএস ভালবেসেই নিয়েছেন।
উনি কমিউনিস্ট বলে মালাটা গ্রহণ করেননি বোধহয়।’ এ দিন সান্ত্বন বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তি ছাত্রের বিরুদ্ধে আলাদা করে অভিযোগ করা শিক্ষককে মানায় না। তবে, এই ঘটনা আদৌ কোনও ভাল উদাহরণ নয়।’’ ওই ভিডিয়োয় সান্ত্বনকে দেখা যায়, পার্থ বলে এক জনের নাম ধরে ডাকতে। তিনি বিভাগের প্রধান পার্থসারথি চক্রবর্তী। পার্থসারথি এ দিন বলেন, ‘‘ওই ছাত্রকে ডেকে বলেছি, এমন ঘটনা না হলেই ভাল হত।’’ বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।