assembly election আরজি কর কাণ্ডের পর সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ যেভাবে কলকাতার রাস্তায় আছড়ে পড়েছিল, তা দেখে অনেকে ভিন্ন ভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করছিলেন। তাঁদের মত, ছিল সামগ্রিক ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত অসন্তোষ ও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার প্রভাবই আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদের আড়ালে দেখা যাচ্ছে। আবার কারও ব্যাখ্যা ছিল, গ্রামে এর প্রভাব কম। তবে বাস্তবে সত্যিই কী প্রভাব পড়েছে তার একটা লিটমাস পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেল মঙ্গলবার। west bengal assembly electionপশ্চিমবঙ্গে ৬টি বিধানসভার উপ নির্বাচন বকেয়া ছিল। এদিন তার নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে দিল নির্বাচন কমিশন।
ওই ৬টি বিধানসভা হল উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া ও নৈহাটি, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া জেলার তালড্যাংরা, কোচবিহারের সিতাই এবং আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট। এই ৬টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে ১৩ নভেম্বর। ফল ঘোষণা হবে ২৩ নভেম্বর। হাড়োয়া বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম। তাঁকে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। হাজি নুরুল জিতেছিলেন লোকসভা ভোটে।
কিন্তু সদ্য তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তার ফলে হাড়োয়া বিধানসভার পাশাপাশি বসিরহাট লোকসভাতেও উপ নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তবে আপাতত শুধু হাড়োয়া বিধানসভার উপ নির্বাচন হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নৈহাটিতে বিধায়ক ছিলেন প্রাক্তন সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তিনি ব্যারাকপুর লোকসভা আসনে জিতেছেন বলে নৈহাটিতে উপ নির্বাচন হবে। একই ভাবে মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া মেদিনীপুর লোকসভা আসন থেকে জিতেছেন। মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে জিতেছেন।
বাঁকুড়ার বর্তমান সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী ছিলেন তালড্যাংরার বিধায়ক। আবার সিতাইয়ের বিধায়ক ছিলেন কোচবিহারের বর্তমান সাংসদ জগদীশচন্দ্র বাসুনিয়া। ঘটনা হল, আরজি কর কাণ্ডের পর বিজেপি এবং বাম দুই শিবিরই বেশ অক্সিজেন পেয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। ফলে শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, আসন বিধানসভার উপ নির্বাচন বিজেপি ও বামেদের কাছেও লিটমাস পরীক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে। দেখার বিষয় হল, নৈহাটি বা মেদিনীপুরের মতো শহরাঞ্চলে তৃণমূলের ভোট কমে কিনা। গ্রামের ভোটেরই বা গতি প্রকৃতি কী।
এবং তৃণমূল বিরোধী ভোট বাম ও বিজেপির মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে নাকি সেই ভোটের মেরুকরণ ঘটবে কোনও একদিকে। বাংলায় অতীতে বাম জমানায় দেখা যেত, উপ নির্বাচনে সরকার সব সময়েই চাপে থাকত। কিছু উপ নির্বাচন মাইলফলক হয়ে গিয়েছিল। তৃণমূল জমানায় তেমন খুব একটা দেখা যায়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম বলতে ছিল সাগরদিঘি বিধানসভার উপ নির্বাচন। তবে সেই ভোটের পর জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী আবার তৃণমূলে যোগ দেন। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। প্রায় ১৪ বছর সরকারে থাকার পর এই প্রথম কঠিন প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মুখোমুখি সরকার। আরজি কর কাণ্ডে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদও দেখা গিয়েছে। ফলে আসন্ন উপ নির্বাচন মাইলফলক হয়ে উঠতেই পারে।