হরিয়ানায় কংগ্রেসের আশায় জল ঢেলে দিলেন আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে কার্যত নিশ্চিত করলেন সে Historic Haryana hat-trick for BJP রাজ্যে টানা তিন বার বিজেপির ক্ষমতায় আসা। মঙ্গলবার ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এমনই কথা বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। ৯০ আসনের হরিয়ানায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ৪৬। ফল বলছে, এক দশক পরে আবার সেই লক্ষ্য ছুঁতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল। ২০১৪ সালে ৪৭টি আসনে জিতে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা ক্ষমতা দখল করলেও ২০১৯-এ বিজেপির আসন ৪০-এ নেমে গিয়েছিল।
সরকার গড়তে আইএনএলডি-ছুট দুষ্মন্ত চৌটালার দল জননায়ক জনতা পার্টি (জেজেপি)-র উপর নির্ভর করতে হয়েছিল তাদের। ভোট শতাংশের হিসাব বলছে, বহু আসনে নোটার চেয়ে কম ভোট পেলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে নিজের ‘নাক কেটে’ কংগ্রেসের ‘যাত্রাভঙ্গ’ করেছে আপ। তা ছাড়া, লোকসভা ভোটের পাঁচ মাসের মধ্যেই ‘ইন্ডিয়া’য় ফাটল ভোটারদের একাংশকে প্রভাবিত করেছে বলেও বিরোধীদের অনেকে মনে করছে।
বিধানসভা ভোটে দু’দলের জোট হলে বিজেপির জয় সহজ হত না বলেই তাঁদের ধারণা। এ ক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে কংগ্রেসের চেয়েও আপের উপর ‘চাপ’ বেশি। কারণ, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লির বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। সেখানে ২০১৩ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় রয়েছে আপ। এ বারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেও দিল্লির সাতটি আসনে বিজেপির জয় ঠেকাতে পারেননি কেজরী। আবগারি মামলায় গ্রেফতারির পরে ছ’মাস তিহাড় জেলে কাটিয়ে হরিয়ানায় প্রচারে নেমেছিলেন আপ প্রধান। কিন্তু দলের বিপর্যয় ঠেকাতে পারেননি।
ঘটনাচক্রে, হরিয়ানার পড়শি রাজ্য পঞ্জাবে সরকার চালাচ্ছে আপ। দুই রাজ্যের যৌথ রাজধানী চণ্ডীগড়ে কংগ্রেসের সমর্থনেই কেজরীর দলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। টানা এক দশক ক্ষমতায় থাকার পরেও ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া’ অতিক্রম করে হরিয়ানায় আবার নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। কৃষক আন্দোলনের আঁচ, বিনেশ ফোগাটের ‘বঞ্চনা’, বিজেপি নেতা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে হরিয়ানার কয়েক জন মহিলা কুস্তিগিরের তোলা যৌন নিগ্রহের অভিযোগ, চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘিরে ক্ষোভের ছায়া পড়েনি হরিয়ানার বিধানসভা ভোটের ফলে।
এর পিছনে পদ্মশিবিরের নিপুণ ‘বুথ লেভেল ম্যানেজমেন্ট’-এর পাশাপাশি জাতপাতের অঙ্কেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে ভোটপণ্ডিতদের একাংশ মনে করছেন। তাঁদের বিশ্লেষণ বলছে, উত্তর ও মধ্য হরিয়ানার জাঠ প্রভাবিত অঞ্চলে কংগ্রেস ভাল ফল করলেও দক্ষিণে অ-জাঠ অঞ্চলে বড় জয় পেয়েছে বিজেপি। ভাল ফল করেছে রাজ্যের পশ্চিম অংশেও। পরিসংখ্যান বলছে, হরিয়ানায় জাঠ ভোট প্রায় ২৭ শতাংশ, দলিত (এসসি) ২১ শতাংশ, অন্যান্য অনগ্রসর (ওবিসি) প্রায় ৩৩ শতাংশ। জাঠ ভোট কংগ্রেস, আইএনএলডি, জেজেপির মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে।
‘উচ্চবর্ণ’ এবং ওবিসি ভোটের অধিকাংশই পেয়েছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিংহ সাইনি ওবিসি জনগোষ্ঠীর হওয়ায় বিজেপি সুবিধা পেয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেসের জাঠ নেতা ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার সঙ্গে মতবিরোধের কারণে দলিত নেত্রী কুমারী শৈলজা প্রচার পর্ব থেকে দূরে সরে থাকারও সুফল পেয়েছে তারা। এমনকি, ‘জাঠ প্রভাবিত’ বলে চিহ্নিত কয়েকটি আসনেও বিজেপির পক্ষে অ-জাঠ ভোটের একত্রীকরণ দেখা গিয়েছে এ বারের বিধানসভা ভোটে! তা ছাড়া, নুহ্র সাম্প্রতিক গোষ্ঠীহিংসাও বিজেপির পক্ষে মেরুকরণ ঘটিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
টানা তিন বার ভোটে হারলেও কংগ্রেসের ভোট এবং আসন দু’টিই বেড়েছে হরিয়ানায়। ২০০৪ থেকে টানা এক দশক ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস ২০১৪-য় হরিয়ানার ভোট এবং আসনসংখ্যার হিসাবে তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছিল। সাড়ে ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিল মাত্র ১৫ আসনে। ২৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৯ আসনে জিতে দ্বিতীয় হয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালার আইএনএলডি। ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে ২৮ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে ৩১টি আসনে জিতে দ্বিতীয় হয়েছিল কংগ্রেস।
Historic Haryana hat-trick for BJP এ বার আসনসংখ্যায় বিজেপির তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও ভোট শতাংশের হিসাবে কংগ্রেস প্রায় তুল্যমূল্য। সে রাজ্যে রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দলের ঝুলিতে গিয়েছে প্রায় ৩৯.১ শতাংশ ভোট। বিজেপি প্রায় ৩৯.৯ শতাংশ। অর্থাৎ, দু’দলের ব্যবধান এক শতাংশেরও কম। অন্য দিকে আপ পৌনে ২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। ঘটনাচক্রে, এ বার হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটের প্রচার পর্বে পালাবদলের ইঙ্গিত ছিল। অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষাতেও বিজেপির তুলনায় কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখা হচ্ছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে এক ডজনের বেশি জনসভা করলেও এ বার মাত্র চারটি প্রচার কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। গত বছর তেলঙ্গানায় বিধানসভা ভোটের প্রচারেও এ ভাবেই কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন মোদী। দক্ষিণের ওই রাজ্যে কংগ্রেস বিপুল জয় পেয়েছিল। হরিয়ানায় তার পুনরাবৃত্তির আশা করেছিলেন রাহুল-খড়্গেরা। কিন্তু তা মিলল না।