বাস্তু শাস্ত্র মতে পূর্ব দিকে শয়নকক্ষ হলে কী সমস্যা দেখা দেয় জেনে নিন

বাস্তু শাস্ত্র  মতে পূর্ব দিকে শয়নকক্ষ হলে কী সমস্যা দেখা দেয় জেনে নিন

আগে একতলা, দোতলা বা তিনতলা বাড়িই চোখে পড়ত বেশি। কিন্তু বর্তমানে এই বাড়িগুলিকেই প্রোমোটিংয়ের হাতে তুলে দিয়ে ফ্ল্যাটে উঠছেন সকলে। ছোট ছোট এই ফ্ল্যাটগুলিতে সঠিক ভাবে বাস্তু নিয়ম মেনে চলা সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। ফলে পরিবারে নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। বাস্তু শাস্ত্রে আদর্শ ও শুভ শক্তিতে পরিপূর্ণ ঘর কেমন হওয়া উচিত, তার উল্লেখ রয়েছে— 

কোন দিকে বাড়ি থাকা শুভ বাস্তু মতে, পূর্ব, ঈশান ও উত্তর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিক। বায়ব্য ও পশ্চিম দিক না খুব ভালো, না খুব খারাপ। তবে আগ্নেয়, নৈঋত্য ও দক্ষিণ দিককে শুভ মনে করা হয় না। 

 ঘর কেমন হওয়া উচিত বাস্তু অনুযায়ী ঘর নির্মাণ করলে এর সম্মুখ ও পশ্চাৎ ভাগে আঙিনা থাকা উচিত। নিজের জমি ও নিজের ছাদ হওয়া উচিত। চন্দ্র এবং বৃহস্পতির সঙ্গে যুক্ত গাছপালা থাকা উচিত। এমনকি বাড়ির ভিতর বাস্তু শাস্ত্র সম্মত জিনিস থাকা উচিত। বাড়িতে কোনও অনাবশ্যক জিনিস রাখবেন না। বাড়ির প্রবেশদ্বার সুন্দর ও সুসজ্জিত রাখুন। দরজা ও জানালা থেকে যাতে ভালো হাওয়া ও আলো আসে, সে বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত।

 জমির ঢাল কেমন হবে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে শক্তি সঞ্চার হওয়া উচিত। সন্ধেবেলা পাখী উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে যায়। অতএব, পূর্ব, উত্তর ও ঈশানের দিকে জমির ঢাল হলে ভালো। বাড়ি তৈরির জন্য জমি নির্বাচন করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জমি বাস্তু অনুযায়ী হলে বাড়ি আরও শুভ ফল প্রদান করে।

 বাড়ি কোথায় বানাবেন   মন্দিরের পাশে বাড়ি থাকলে সবচেয়ে ভালো। দূরে হলে মধ্যম এবং যেখান থেকে মন্দির দেখা দেয় না, তা নিম্নমানের হয়। বাড়ি সেই শহরে হওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ, যেখানে একটি নদী, ৫টি পুকুর, ২১টি স্টেপওয়েল ও দুটি পাহাড় থাকে। বাড়ি পাহাড়ের উত্তর দিকে তৈরি করা উচিত। আবার শহরের পূর্ব, পশ্চিম বা উত্তর দিকে বাড়ি তৈরি করুন। বাড়ির সামনে তিনমাথা রাস্তা থাকা উচিত নয়। বাড়ির একদম সামনে কোনও পোস্ট বা গাছ না-থাকাই ভালো। সজ্জন ও স্বজাতীয় ব্যক্তি যেখানে থাকে, সেখানে বাড়ি নির্মাণ করা উচিত।

 বাড়ির আঙিনা কেমন হবে ছোট হলেও বাড়ির সম্মুখ ও পশ্চাদ ভাগে আঙিনা থাকা উচিত। আঙিনায় তুলসী, বেদানা, কাড়ি পাতা, নীম, আমলকি ইত্যাদি ছাড়াও শুভ শক্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন ফুল গাছ লাগান।

 স্নানঘর ও শৌচালয় কেমন হবে  স্নানকক্ষে চন্দ্র ও শৌচালয়ে রাহুর বাস হয়। শৌচালয় ও স্নানকক্ষ এক সঙ্গে থাকা উচিত নয়। শৌচালয় বাড়ির নৈঋত্য (পশ্চিম-দক্ষিণ) কোণ অথবা নৈঋত্য কোণ ও পশ্চিম দিকের মাধামাঝি স্থানে তৈরি করা উত্তম। এ ছাড়াও শৌচালয়ের জন্য বায়ব্য কোণ ও দক্ষিণ দিকের মধ্যের স্থানও উপযুক্ত। শৌচালয়ের সিট এমন হওয়া উচিত, যাতে বসার সময় মুখ দক্ষিণ বা উত্তর দিকে থাকে। পূর্ব দিকে বাথরুম বানানো উচিত। স্নানের সময় মুখ পূর্ব ও উত্তর দিকে থাকলে তা অধিক লাভজনক। বাথরুমে ওয়াশ বেসিন থাকলে, তা উত্তর বা পূর্ব দিকে লাগান। আয়না লাগানো উচিত উত্তর বা পূর্ব দিকে। দরজার সামনে আয়না থাকা উচিত নয়।

 শয়নকক্ষ  কোন দিকে তৈরি করা যায়  এটি বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই এখানে শান্তি বিরাজ করা উচিত। অনেক সময় শয়নকক্ষে সুবিধার সমস্ত জিনিস থাকা সত্ত্বেও ভালো ঘুম হয় না। মাস্টার বেডরুম থাকা উচিত দক্ষিণ-পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম কোণে। আবার দোতলা ঘরে থাকলে, দোতলার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে শয়নকক্ষ থাকা উচিত। ঘুমানোর সময় মাথা দেওয়ালে লাগিয়ে এবং উত্তর বা পশ্চিম দিকে পা রেখে ঘুমানো ভালো।

 পড়াশোনার ঘর পূর্ব, উত্তর, ঈশান ও পশ্চিমের মধ্য স্থানে স্টাডি রুম থাকা উচিত। পড়াশোনার সময় দক্ষিণ ও পশ্চিমের দিকে পিঠ করে, পূর্ব ও উত্তরের দিকে মুখ করে পড়লে, ভালো ফল লাভ করা যায়। পিঠের পিছনে দরজা বা জানালা থাকা উচিত নয়। স্টাডি রুমের ঈশান কোন খালি রাখবেন।

 রান্নাঘর  রান্নাঘর সঠিক দিকে তৈরি করা না-হলে পরিবারের সদস্যদের হজমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। রান্নাঘরের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হল আগ্নেয় কোণ অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব দিক। এটি অগ্নির স্থান। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিম দিকে রান্নাঘর তৈরি করা যেতে পারে।

 অতিথি কক্ষ অতিথি দেবতা সমান। তাই উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিকে অতিথি কক্ষ তৈরি করা উচিত। এটি অতিথিদের জন্য শুভ।

 ঠাকুরঘর ইশান কোণ ঠাকুর রাখার জন্য শ্রেষ্ঠ স্থান। এদিকে ঠাকুরের জন্য পৃথক ঘর তৈরি করা উচিত।