গৌতম বুদ্ধের জীবনী

গৌতম বুদ্ধের জীবনী

দশ অবতারের এক অবতার মহামানব গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের আগে বুদ্ধদেবের নাম ছিল সিদ্ধার্থ বা গৌতম বা গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) । গৌতম বুদ্ধ ভোগবাসনা চরিতার্থ-করণ এবং তার অঞ্চলে প্রচলিত শ্রমণ আন্দোলনের আদর্শ অনুসারে কঠোর তপস্যার মধ্যে মধ্যপন্থা শিক্ষা দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) মগধ ও কোশল সহ পূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও শিক্ষাদান করেন। 

বৌদ্ধ ধর্ম গুরু গৌতম বুদ্ধ এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । গৌতম বুদ্ধ এর জীবনী – Gautam Buddha Biography in Bengali বা গৌতম বুদ্ধ এর আত্মজীবনী বা (Gautam Buddha Jivani Bangla. A short biography of Gautam Buddha. Gautam Buddha Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) গৌতম বুদ্ধ এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

 গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) ছিলেন একজন সম্যাক সম্বুুদ্ধ (তপস্বী) ও জ্ঞানী, যাঁর তত্ত্ব অনুসারে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) সিদ্ধার্থ গৌতম, শাক্যমুনি বুদ্ধ, বা ‘বুদ্ধ’ উপাধি অনুযায়ী শুধুমাত্র বুদ্ধ নামেও পরিচিত। অনুমান করা হয়, গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) খ্রিস্টপূর্ব ৬২৫ অব্দে এক সময়ে প্রাচীন ভারতের পূর্বাঞ্চলে জীবিত ছিলেন এবং শিক্ষাদান করেছিলেন।

গৌতম বুদ্ধের জন্ম – Gautam Buddha Birthday : সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে হিমালয়ের তরাই অঞ্চলে কপিলাবস্তু রাজ্যের ক্ষত্রিয় অধিপতি শাক্যবংশীয় শুদ্ধোধনের পুত্র সিদ্ধার্থের জন্ম হয় বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনী উদ্যানে । শিশু অবস্থায় মাতা মায়াদেবীর মৃত্যু হলে বিমাতা মহাপ্রজ্ঞাবতী গৌতমী গৌতম বুদ্ধকে (Gautam Buddha) লালন পালন করেন । 

 গৌতম বুদ্ধের শৈশবকাল – Gautam Buddha Childhood : শৈশবেই সিদ্ধার্থ অত্যন্ত , শাস্তস্বভাব , উদাসী নির্লিপ্ত । বৈভব বিলাসে আকর্ষণ বোধ করেন না । মানুষের দুঃখ কষ্টে তাঁর হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে । পুত্রের মনের এই ভাবান্তর লক্ষ্য করে পিতা শুদ্ধোধন অত্যন্ত বিচলিত হন।

 গৌতম বুদ্ধকে (Gautam Buddha) সাংসারিক ভোগের জগতে আসক্ত করার জন্য যশোধরা নামক এক পরমা সুন্দরী কন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন । কিন্তু দাম্পত্য জীবন গৌতম বুদ্ধকে (Gautam Buddha) বেশিদিন আকৃষ্ট করতে পারে না । গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) অনুভব করেন মানুষের জীবনের অন্তহীন শোক দুঃখ এবং এই শোক দুঃখ মুক্তির উপায় সন্ধানে তিনি আকুল হয়ে উঠলেন । 

 ২৯ বছর বয়সে তার এক পুত্র সন্তান জন্মাল । পুত্রের নাম রাহুল । গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) বুঝলেন সংসার মায়ায় ক্রমশই তিনি জড়িয়ে পড়বেন । কাজেই সংসার স্বজন ছিন্ন করে গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) গৃহত্যাগ করলেন । গ্রহণ করলেন সন্ন্যাস জীবন ।  সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করে বিভিন্ন স্থানে সত্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ালেন । বহু সাধুর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে । বহু তীর্থ পর্যটন করে গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) গয়ার কাছে ‘ উরুবিম্ব ’ নামক স্থানে এসে কঠোর তপস্যায় মগ্ন হলেন । 

 যোগসাধনা , আত্মপীড়ন ও কৃচ্ছ্র সাধনায় তার দেহ শীর্ণ হল । ” অনাহার অনিদ্রায় গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) দুর্বল হলেন । তবু দিব্যজ্ঞান লাভ হোল না । এখন গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) উপলব্ধি করলেন মানসিক একাগ্রতার জন্যে দেহ ও মনের সুস্থতা প্রয়োজন । গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) নৈরঞ্জনা নদীতে স্নান করে বোধগয়ায় এক অশ্বত্থ বৃক্ষতলে বসলেন ধ্যানে । 

 একদিন এক ধনবান বণিক কন্যা সুজাতা গৌতমকে দেবতা জ্ঞানে মিষ্টান্ন বিতরণ করলেন । ওই মিষ্টান্ন গ্রহণ করে গৌতম দুর্বল দেহে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করলেন । ধ্যানের গভীরতা বৃদ্ধি পেল । ওই রাত্রেই গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) দিব্যজ্ঞান লাভ করলেন । গৌতম হলেন বুদ্ধ অর্থাৎ জ্ঞানী ৷ সেই অশ্বত্থ বৃক্ষ হোল ‘ বোধিবৃক্ষ ‘ , সেই স্থানেই হল বুদ্ধগয়া ।

 বুদ্ধত্ব লাভের পর গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) ধর্মপ্রচারে মন দিলেন তিনি সর্বপ্রথম ধর্মপ্রচার করেন বারাণসীর কাছে সারনাথের মৃগদাব উপবনে । জীবনের বাকী ৪৫ বছর ধরে বুদ্ধদেব দূরদুরান্তে ভ্রমণ করেন । গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) তাঁর বাণী প্রচার করেন । ধনী – দরিদ্র , পুরুষ – নারী , উচ্চবর্ণ – নিম্নবর্ণ নির্বিশেষে শতসহস্র মানুষ তার প্রচারিত ধর্মে দীক্ষিত হন । এদের মধ্যে ছিলেন অনেক সমসাময়িক রাজাও । বিম্বিসার , প্রসেনজিৎ , এমন কি অজাতশত্রুও শেষ জীবনে এই ধর্মমত গ্রহণ করেন । এইধর্ম বৌদ্ধধর্ম নামে খ্যাত । বুদ্ধদেব তার শিষ্যদের জন্য সংঘ নামক প্রতিষ্ঠান গড়লেন । উদ্দেশ্য সব ধর্মাশ্রয়ীদের মধ্যে সমবায় ও একতা বৃদ্ধি করা , জাতিভেদজনিত সংকীর্ণতা দূর করা। 

তৎকালীন ভারতবর্ষে বুদ্ধদেবের সহজ সরল ধর্মমত সকল শ্রেণীর মানুষের মনেই সাড়া জাগিয়েছিল । বৌদ্ধধর্ম প্রসারে সংঘের অবদান উল্লেখযোগ্য । পরবর্তীকালে সম্রাট অশোক ও সম্রাট কণিষ্কের উদ্যোগে বৌদ্ধধর্ম ভারতে ও ভারতের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বধর্মে পরিণত হয় ।   বুদ্ধদেবের জীবিতকালে গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) এর উপদেশাবলী ও ধর্মনীতি লিখিত রূপ পায়নি । মুখে মুখে জনগণের সহজ বোধ্য ভাষায় বুদ্ধদেব উপদেশ দিতেন । ‘ মহাপরিনির্বাণের ‘ পরে বুদ্ধদেবের বাণী সংকলনের জন্য রাজগৃহে প্রথম বৌদ্ধ সম্মেলন বা সংগীতি আহ্বান করা হয় । রাজগৃহের সপ্তপর্ণী পর্বত গুহায় অনুষ্ঠিত এই সংগীতি বুদ্ধদেবের উপদেশাবলী দুটি খন্ডে সংকলিত করে । 

 ধর্মের জটিলতা থেকে গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন । বিভিন্ন স্থানে তাঁর বাণী প্রচার করে ৪৮৩ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ৮০ বছর বয়সে গোরক্ষপুরের কুশীনগরে বুদ্ধদেব দেহত্যাগ করেন । গৌতম বুদ্ধ (Gautam Buddha) এই দেহত্যাগকে ‘ মহাপরিনির্বাণ ’ লাভ বলা হয় ৷