মহাত্মা গান্ধীর জীবনী

মহাত্মা গান্ধীর জীবনী

 মহাত্মা গান্ধীর জীবনী – Mahatma Gandhi Biography in Bengali : ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীতার সারাটা জীন ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে গেছেন । মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) ছিলেন অহিংসবন আন্দোলনের নেতা । সশস্ত্র সংগ্রাম মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) পছন্দ করতেন না। তাই নেতৃত্বে ভারতে আস্তে – আস্তে স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারত ছাড়তে বাধ্য হয় ।

ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা অর্জন করে । জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । মহাত্মা গান্ধী এর জীবনী – Mahatma Gandhi Biography in Bengali বা মহাত্মা গান্ধী এর আত্মজীবনী বা (Mahatma Gandhi Jivani Bangla. A short biography of Mahatma Gandhi. Mahatma Gandhi Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) মহাত্মা গান্ধী এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।  

মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) ছিলেন একজন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে । এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

 ভারতের কাথিয়াবাড় প্রদেশের পােরবন্দরনামকস্থানে একপ্রাচীন বেনিয়া পরিবারে ১৮৬৯ খ্রিঃ ২ রা অক্টোবর মােহনদাস করমচ গান্ধী জন্মগ্রহণ করেন । মােহনদাসের পূর্বপুরুষগণ বংশানুক্রমে কাথিয়াবাড় প্রদেশের পােরবন্দর নামক স্থানের দেওয়ান ছিলেন ।  গান্ধীজির বাবার নাম করমচাদ । মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) ডানাম ছিল কাবা গান্ধী । গুজরাটের সামাজিক নিয়ম হল , ছেলের নামকরণের সময় বাবার নামও তার নামের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয় ।

এই নিয়ম অনুসারেই করমচাদের ছেলে মােহনদাসের নামের সঙ্গে তার বাবার নাম জুড়ে নাম রাখা হয়েছিল মােহনদাস করমচাঁদ গান্ধী । গান্ধীজি ছিলেন তার বাবার সর্বকনিষ্ঠ পুত্র ।  গান্ধীজির মাতার নাম পুত্তলীবাঈ । তিনি ছিলেন পরম নিষ্ঠাবতী মহিলা । পুজো আর সূর্য দর্শন না করে তিনি জল গ্রহণ করতেন না ।  বাল্য ও শৈশবের শিক্ষা কাথিয়াবাড়ে সমাপ্ত করেন মােহনদাস । এরপর বিলাতে গিয়ে ব্যারিস্টারি অধ্যয়ন করেন । পরে দেশে ফিরে এসে বােম্বাই হাইকোর্টে আইনব্যবসা আরম্ভ করেন ।

গান্ধীজি সত্য ও সাহসের মন্ত্র পেয়েছিলেন তার বাবার কাছ থেকে । মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন উপবাস ও কঠোর ব্রত পালনের শিক্ষা । শৈশবকাল থেকেই মহাত্মা গান্ধী মিথ্যা কথা বলা , চুরি করা । ইত্যাদিকে পাপকর্ম বলে মনে করতেন । এই কারণেই মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) সত্যাশ্রয়ী হয়ে উঠেছিলেন ।  মাত্র তেরাে বছর পার হতেই মহাত্মা গান্ধীকে (Mahatma Gandhi) বিয়ে দেওয়া হয় কস্তুরি বাঈ নামে এক সমবয়সী কিশােরীর সঙ্গে । যােলাে বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী প্রথম সন্তানের পিতা হন সেইসাথে আপন পিতাকে হারান ।

 ১৮ বছর বয়সে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন । উচ্চশিক্ষার জন্য বড়ভাই মহাত্মা গান্ধীকে (Mahatma Gandhi) বিলেতে পাঠাতে চাইলেন ব্যারিস্টারী পড়ার জন্য । তখনকার দিনে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতীয় হিন্দু সমাজে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া ছিলাে ঘােরতর পাপের কাজ । এই জন্য রাজকোটের অনেক সমাজপতি বড়ভাইকে এবং তাদের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার হুমকি দিলেন । কিন্তু গান্ধী নিজে ব্যারিস্টারী পড়ার জন্য ছিলেন খুবই আগ্রহী । তাই মা পুতলি বাঈ কিছুটা গররাজী হলেও ছেলের মঙ্গল প্রত্যাশায় তাকে বিলেতে যেতে অনুমতি দিলেন ।

১৮৮৮ সালের ৪ ঠা সেপ্টেম্বর মহাত্মা গান্ধী বিলাতগামী জাহাজে চড়ে বসলেন । ১৮৯১ সালে মহাত্মা গান্ধী ব্যারিস্টারী পাস করে দেশে ফিরে এলেন এসে শুনলেন মা মারা গেছেন । কিছুদিন পরে মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) আইন ব্যবসা শুরু করলেন । কিন্তু মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) অনেকটা লাজুক প্রকৃতির ছিলেন । প্রথম দিকে আইন – ব্যবসায়ে তেমন জুত করতে পারলেন না।  ১৮৯৩ খ্রিঃ দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের একটি জটিল মামলার প্রয়ােজনে মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) নেটাল যাত্রা করেন ।

পরে সেখান থেকে ট্রান্সভাল যাত্রা করেন।  ১৮৯৪ খ্রিঃ মােহনদাস মুষ্টিমেয় ভারতীয়দের নিয়ে নেটাল ইণ্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন । এই সময় নেটাল সরকার এশিয়াটিক এক্সক্লশন অ্যাক্ট অর্থাৎ এশিয়াবাসী বিতাড়ন নামক একটি আইন পাস করেন । মােহনদাস এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের ধন্যবাদভাজন হন । নেটাল ও ট্রান্সভালে ভারতীয়দের দুরবস্থার বিষয় সাধারণকে এবং সরকারকে জানাতে ১৮৯৫ খ্রিঃ মােহনদাস ভারতে আসেন। তার ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণ বৈষম্যবাদী শেতাঙ্গরা তার প্রতি অত্যন্ত রুষ্ট হন ।

সেখান থেকেই রাজনীতিতে প্রথম হাতেখড়ি । মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) এবং পরবর্তীতে ভারতে ফিরে এসে মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) সএিকাঙালে পাওনা শুরু করেন । দেশমুক্তির নেতৃত্ব তুলে নেন নিজ রুগে মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) বলে যােগ দেন ।  বৃটিশদের অপশাসন ও অত্যাচার – নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ শিলেশন গান্ধীজীর অসহযােগ আন্দোলন এবং একই সঙ্গে ভারতের পাতা লাভের প্রস্তাব গৃহীত হয় ।

আন্দোলন ক্রমশঃ প্রবল হয়ে উঠতে থাকে । মহাত্মা গান্ধী ১৯৪৯ , সালে বৃটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়াে ‘ আন্দোলন গড়ে তােলেন । মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) কারারুদ্ধও হন বহুবার।  এদিকে মুসলিমদের নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ , মুসলিম । সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার জন্য ভারত ভাগ করে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে সােচ্চার হয়ে ওঠেন । ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশযুদ্ধ শেষ হলে বৃটিশরা ভারতের স্বাধীনতা দেবার অঙ্গীকার করে । ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৫ ই আগস্ট ভারত দেশভাগের মুল্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে ।

সেই বছরেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য গান্ধীজির । নােয়াখালি সফর ভারত ইতিহাসের এক উল্লেখযােগ্য ঘটনা । পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে একদিন আগে ১৪ ই আগস্ট ১৯৪৭ ।  ১৯৪৮ খ্রিঃ ৩০ শে জানুয়ারী দিল্লিতে এক প্রার্থনা সভা গান্ধীজি এক আততায়ীর হাতে নিহত হন । বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও বিশ্ববিখ্যাত মনীষী জর্জ বার্নার্ড গান্ধীজীর এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে শােক প্রকাশ করে মন্তব্য । করেন— “ খুব ভালাে মানুষ হওয়াটাও একটা বিপজ্জনক ব্যাপার । ” গান্ধীজির জীবন দর্শন ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার উল্লেখযােগ্য অবদানের জন্য মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) জাতির জনক রূপে স্বীকৃতি লাভ করেছেন ।