সিকিমের দর্শনীয় স্থান

সিকিমের দর্শনীয় স্থান

darshaniya sthana Sikkim সিকিমের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের সময় কাল সিকিমের দর্শনীয় স্থান গুলো আসলে সারা বছর তার নিজ নিজ প্রকৃতির রূপে সেজে থাকে । তবে উত্তর সিকিমে বরফ আবৃত পাহাড় আর স্নোফল দেখতে চাইলে আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত । জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বরফ  বেশি থাকে বলে বেশিরভাগ সময় রাস্তা চলাচল বন্ধ থাকার সম্ভবনা থাকে । তবে এপ্রিল, মে মাসে  বরফ কম থাকে আর যদি ভাগ্য ভালো হয় তাহলে সেসময় স্নোফল পেতেও পারেন। বর্ষাকালেও সিকিম ভ্রমণ করতে পারেন ।

বর্ষাকালে উত্তর সিকিম, দক্ষিণ সিকিম ও পশ্চিম সিকিম সবুজে ভরে উঠে। তবে বর্ষাকালে ভ্রমণের পূর্বে  গ্যাংটকের ট্রাভেল এজেন্সি গুলোর সাথে যোগাযোগ করে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে উত্তর সিকিমের লাচু, ইয়ামত্থাম ভ্যালি, জিরো পয়েন্ট এবং পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু লেক যাওয়া যাচ্ছে কিনা। সাধারণত বর্ষাকালে এ সমস্ত জায়গায় পাহাড়ি ধস নামে ।  যদি বর্ষাকালে উত্তর সিকিম ভ্রমণ করতে  চান তাহলে বরফ ছাড়া  অন্য ধরণের একটি প্রকৃতি পাবেন যা আপনার কল্পনা অতীত। চারদিকে সবুজ আর সবুজ যেন মনে হবে আপনি কাশ্মীরের সবুজ স্বর্গে পৌছে গেছেন। সিকিমের গ্যাংটক এবং পেলিংএ প্রায় সারা বছর যাওয়া যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও শুধু মাত্র গ্যাংটক ঘুরতে আসেন।

গ্যাংটক সিকিম রাজ্যের রাজধানী শহর হল গ্যাংটক। গোটা শহরটি যেন পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে। ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরে শপিং মল, ক্যাসিনো, সিনেমা হল, ভিডিও পার্লার, সাইবার কাফে, কিউরিও শপ, জামাকাপড় ও ইলেকট্রনিক্সের দোকান ইত্যাদি আধুনিক শহরের সব উপাদানই পাবেন। শহরের প্রাণকেন্দ্রে আছে এম জি মার্গ (মহাত্মা গাঁধী মার্গ)। ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে সেরে নিতে পারেন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। দূরের আকাশে উপস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা হয়তো তখন দ্যুতি ছড়াচ্ছে।

রোপওয়ে চড়ে আকাশপথেও দেখে নিতে পারেন গ্যাংটক ও চারপাশের দৃশ্য। গ্যাংটক শহর ও তার আশপাশের দ্রষ্টব্য এতই বেশি যে সাইটসিয়িং করতে অন্ততপক্ষে দুটো দিন সময় লাগবেই। রুমটেক মনাস্ট্রি, রাঙ্কা মনাস্ট্রি, এন্‌চে মনাস্ট্রি, চোগিয়াল রাজবাড়ি, ইনস্টিটিউট অব টিবেটোলজি, ডিয়ার পার্ক, বন্‌ঝাকরি ঝর্না, ফ্যামবং-লো অভয়ারণ্য, হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক, তাশি ভিউ পয়েন্ট, হনুমান টক ইত্যাদি প্রচুর দর্শনীয় স্থান দেখে নিতে পারেন হাতে সময় নিয়ে। গ্যাংটক বেড়াতে আসা প্রায় সব পর্যটকই যে পথে পা বাড়ান, তা হল ছাঙ্গু লেক, নাথুলা ও বাবামন্দির। আগাম অনুমতি নিয়েই যাওয়া যায় এ পথে।

চড়াই রাস্তা ধরে গাড়ি পৌঁছে যাবে ৩৮ কিলোমিটার দূরবর্তী ছাঙ্গু লেকে। উচ্চতা ১২৪০০ ফুট। নীলরঙা জলের সুন্দর সরোবরে ভেসে বেড়ায় পরিযায়ী পাখির দল। এখান থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরেই চিন সীমান্ত নাথুলা। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে দেখা যায় চিনের ঘরবাড়ি, টহলদারি চিনা সৈনিক। ১৪,৪৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই নাথুলা দিয়েই বর্তমানে ভারত-চিন বাণিজ্য চলে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে। ফেরার পথে, নাথুলা গেট থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাবামন্দির দর্শন করে নিতে পারেন। দুর্ঘটনায় অকালমৃত ভারতীয় সেনানী বাবা হরভজন সিংহের স্মৃতিমন্দির এটি। বাবামন্দির দেখে আবার ফিরে আসতে হবে গ্যাংটকেই।

রাবাংলা  বুদ্ধ পার্ক নান্দনিক এই পার্কটির সৌন্দর্য লিখে বা বলে বোঝোনো কখনও সম্ভব নয় । বিশাল গৌতম বুদ্ধের মূতিটি শান্তি ও সৌমতার প্রতীক হয়ে বসে আছে। মূর্তিটি মোনাস্ট্রি বা মঠের উপরে স্থাপন করা হয়েছে ফলে দূর থেকে অকল্পনীয় সৌন্দর্য প্রতীয়মান হয়। সামনে রয়েছে পানির ফোয়ারা আর চারপাশে ফুলের বাগান যেন মোহনীয় করে তুলেছে। আলাদা করে দক্ষিণ সিকিমের নামছি, রাবাংলা বুদ্ধপার্কের সাথে দেখতে পারেন  বোরং মোনাস্ট্রি, টেমি টি গার্ডেন, চারধাম, সাঁই মন্দির সহ আরো কিছু জায়গা ঘুরতে পারেন। সেক্ষেত্রে আরো একটি দিন বাড়তি হিসেব করতে হবে।

 নামচি Namchi হলো দক্ষিণ সিকিমের একটি ছোট শহর যার উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৫০০ ফুট। নামছি খুবই সাজানো গোছানো মনোরম একটি শহর। নামচিতে রয়েছে বড় আকৃতির বৌদ্ধ মূর্তি আর মহাদেবের মূতি। বহু দূর থেকে মহাদেবের মূর্তিটি দেখতে পাওযা যায়।

পেলিং বা পেল্লিং (Pelling) পশ্চিম সিকিমের একটি ছোট শহর পেলিং । গ্যাংটক থেকে পেলিং এর দূরত্ব প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।  সমুদ্র পৃষ্ট থেকে পেলিং এর উচ্চতা প্রায় ৭২০০ ফুট । পশ্চিম সিকিমের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৪৭ হাজার।   আর শুধু পেলিংএর জনসংখ্যা প্রায় ৪৬,৫০০ জন  যা প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৬ জন করে । গ্যাংটক থেকে পেলিং এর দিকে যাওয়ার পথটা দক্ষিণ সিকিম দিয়ে সেক্ষেত্রে একটু সময় নিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরে বা দেখতে পারেন, রাবাংলার দৃষ্টি নন্দন বুদ্ধ পার্ক, টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট।

আর না হলে আলাদা করে পেলিং থেকে আসার পথে দেখতে পারেন। পেলিংকে তিন ভাগে ভাগ করা আছে যেমন লোয়ার পেলিং, মিডল পেলিং, আপার পেলিং  ভ্রমণের সুবিধার জন্য আপার পেলিং এ রাত কাটাতে পারেন। সিকিমের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যেও পেলিং অন্যতম।   পেলিং বা Pelling এর বেশি কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেমনঃ আপার পেলিংর হেলিপেড, স্কাইওয়াক ও বুদ্ধ টেম্পল, রিম্বি অরেঞ্জ গার্ডেন, কেচিপেরি লেক(Khechiperi Lake), কাঞ্চনজঙ্গাফলস, Dubdi Buddhist Monastery, পেমায়াংতসে মোনাস্ট্রি(Pemayangtse Monastry), বার্ড পার্ক।

আপার পেলিংর হেলিপেড- অনেক পর্যটকরা সকাল বেলা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখার জন্য এবং মনোরম একটি স্থানে রাত্রি কাটানোর জন্য আপার পেলিং এর হেলিপেডকে বেছে নেন। এছাড়া সেখানে হোটেল ভাড়াও কমে পাওয়া যায় ।

স্কাইওয়াক – বৌদ্ধ মোনাস্ট্রির  বিশাল আকৃতি বুদ্ধ মূর্তিটি ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট কাচেঁর ব্রিজ দিয়ে হেটে যাওয়া যেটি অসাধারণ এক অভিজ্ঞতার সূচনা ঘটতে পারে।

রিম্বি অরেঞ্জ গার্ডেন বা Rimbi Orange Garden – পেলিং – রিম্বি রাস্তা ধরে যাওয়ার পথে পড়ে রিম্বি কমলা বাগান।  এই কমলা বাগানটি রিম্বি নদীর পাশেই অবস্থিত। এছাড়া এই বাগানে এলাচ, কাঠ বাদামের গাছও দেখতে পাওয়া যায়। রিম্বির রাস্তা ধরে কমলা বাগানের আগে  যেতে যেতে Veor Waterfalls এবং Rimbi waterfalls দেখে নিতে পারেন।

কেচিপেরি লেক বা Khechiperi Lake– এই কেচিপেরি লেকটি স্থানীয়দের কাছে খুবই পবিত্র একটি লেক । এই কেচিপেরি লেকে কেউ নাকি বিশুদ্ধ মনে কোন কিছু প্রার্থনা করলে তার মনের বাসনা পূর্ণ হয় । এত নিরব নিস্তব্ধ একটি স্থান মনে হবে সিকিমে আর দ্বিতীয়টি নেই। তবে কেচিপেরি লেকে গেলে অবশ্যই জোক হতে সাবধান থাকবেন সেখানে প্রচুর জোক গিচগিচ করতে দেখা যায় ।

কাঞ্চনজঙ্গাফলস- কেচিপেরি লেক দেখে চলে যেতে পারেন কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে হিম শীতল পানির ঝর্ণা যা কাঞ্চনজঙ্গাফলস নামে পরিচিত। বিশ রুপি দিয়ে টিকিট ক্রয় করে দেখতে পারেন ঝর্ণাটি।   চাইলে সেখানে হাইকিংও করতে পারেন।

পেমায়াংতসে মোনাস্ট্রি( Pemayangtse Monastry)- পেমায়াংতসে মোনাস্ট্রি বা Pemayangtse Monastry ৩০০ বছরেরও বেশি পুরানো এই নান্দনিক বৌদ্ধ মোনাস্ট্রি। মোনাস্ট্রির ভিতরে ছবি বা ভিডিও করা যায় না । সিডকেওং তুলকু বার্ড পার্ক- সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও ‍শুনশান মনোমুগ্ধকর পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে বার্ড পার্ক। পার্কটিতে বিভিন্ন প্রজাতির  দেশি বিদেশি সুন্দর ‍সুন্দর পাখি রাখা হয়েছে আর পাখি গুলোর কিচিরমিচির শব্দে আপনি হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মায়াজালে। এছাড়া পার্কটিতে ইট সিমেন্ট আর পাথর দিয়ে তৈরি নান্দনিক পাখি ও বিভিন্ন বন্য প্রানীর মূতি রয়েছে । এই পার্কটি প্রবেশের জন্য কোন প্রকার টিকিটের প্রয়োজন হয় না । সকাল বেলা একটি গাড়ি রির্জাভ করে পেলিংএর সমস্ত দর্শনীয় জায়গা গুলো দেখতে দেখতে রেংপো অথবা মেল্লি হয়ে শিলিগুড়ির দিকে ফেরত চলে আসতে পারেন অথবা চাইলে আবার গ্যাংটক ফেরত যেতে পারেন।

 জিরো পয়েন্ট বা Yumesamdong সিকিমের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে এটি আরেকটি সুন্দর ও নৈসর্গিক স্থান। উত্তর সিকিমে ভ্রমণ করতে যাওয়া পর্যটকরা চাইলে ভারত ও চীন সীমান্ত জিরো পয়েন্ট বা ইয়ামেসডং ঘুরে  আসতে পারেন। উত্তর সিকিমের লাচু থেকে প্রায় ৬৯ কিলোমিটার আর ইয়ামত্থাম ভ্যালি থেকে ২৫ কিলোমিটার এই ইয়ামেসডং জিরো পয়েন্ট। এই এলাকাটি সব সময় ঠান্ডা থাকে তবে অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রচুর ঠান্ডা এবং উচু নিচু পর্বত রাস্তা সব গুলো বরফে আবৃত থাকে সে সাথে স্নোফলের দেখা পাওয়া যায় ।

তাই সিকিমের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে জিরো পয়েন্টকে রাখতে পারেন। যেহেতু জিরো পয়েন্টটি প্যাকেজের আওতায় নয় সেহেতু উত্তর সিকিমের প্যাকেজের আওতাভুক্ত লাচু এবং পরের দিন  ইয়ামত্থাম ভ্যালি ঘুরতে গেলে সেখান থেকে গাড়ির ড্রাইভাদের অতিরিক্ত ৩০০০ হাজার রুপি দিলে তারা জিরো পয়েন্ট ঘুরিয়ে নিয়ে গ্যাংটকের দিকে ফেরত আসবে । তবে সেটা নির্ভর করে বাংলাদেশীদের অনুমতি দিচ্ছে কিনা সেটার উপর। কোন কোন সময় বাংলাদেশীদের অনুমতি দেওয়া হয় না।

 ইয়ামত্থাং ভ্যালি বা উপত্যকা  উত্তর সিকিমের প্রধান ও সবচেয়ে আর্কষণীয় জায়গা হলো ইয়ামথাং ভ্যালি । ইয়ামত্থাং ভ্যালির সৌন্দর্যের কথা বলে বোঝানো মত নয়। ইয়ামত্থাং ভ্যালির এর আরেক নাম হলো ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার।  ইয়ামত্থাং ভ্যালির পূর্ব  পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লাচুং নদী যে নদীর স্বচ্ছ পানি দেখতে চমৎকার লাগবে । নদী, পাহাড় আর সবুজ মিলে মিশে অসাধারণ ও মনোরম উপত্যকায় পরিনত হয়েছে । সিকিমের দর্শনীয় স্থান গুলোতে ইয়ামত্থাং ভ্যালি না গেলে ভ্রমণের অনেকখানি অপূর্ণতা থেকে যাবে।  

ইয়ামত্থাং ভ্যালি সারা বছর আলাদা আলাদা এবং অনন্য রূপ নিয়ে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে থাকে। অক্টোবর  থেকে মে পর্যন্ত বরফ ও স্নোফল পাওয়া যায় ।  রাস্তাঘাট, পাহাড়, নদী উপত্যকায় রাশি রাশি বরফের আস্তরণ আর স্নোফল দেখে মনে হবে যেন পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ কাশ্মীর গিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন।  বর্ষাকালে যে কেউ ইয়ামত্থাং ভ্যালির চারপাশের সবুজের প্রেমে হাবুডুবু খেতে পারেন। তাই সিকিমের দর্শনীয় স্থান বিশেষ করে উত্তর সিকিম ভ্রমণে অবশ্যই ইয়ামত্থাং ভ্যালিকে কোন ভাবেই বাদ দেওয়া উচিত নয়।

 লাচুং গ্যাংটক থেকে উত্তর সিকিমের লাচুং এর দূরত্ব প্রায় ১১৮ কিলোমিটার। সকাল বেলায় উত্তর সিকিমের দিকে  যাত্রা করে সাইট সিন করতে করতে লাচুং এ পৌঁছা যায়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮৬০০ ফুট উচ্চাতার লাচুং গ্রামটি বেশ সমৃদ্ধ এবং কল্পনার চেয়েও সুন্দর । সিকিমের দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে লাচুং ভ্রমণ একটি সেরা অংশ হতে পারে। আপনার মনে হতে পারে যেন কোন ক্যানভাসে লাচুংকে কোন শিল্পী মনের মাধুরী মিশিয়ে স্বপ্নের তুলি দিয়ে এঁকেছে। লাচুংএর দিকে ক্রমশ এগিয়ে গেলে শীতের কাপড় গায়ে জড়িয়ে নিতে হবে। লাচুংএ পা সম্প্রদায়ের লোকজন বসাবাস করে থাকে। উচুঁ পাহাড় ঘেরা নান্দনিকতা ও নৈসর্গিক শোভাবৃদ্ধি করে থাকে লাচুএর ঝর্ণা গুলো। মেঘ সব সময় পাহাড়ে আষ্টেপৃষ্টে লেগে থাকে । রাত ও সকাল বেলায় মেঘগুলো রাস্তা ও রিসোর্ট বা হোটেলে উকি ঝুকি দিয়ে থাকে এমনি মেঘ জানার এপাশ দিয়ে ওপাশে বেড়িয়ে যায় ।

 সিকিমের দর্শনীয় স্থান উত্তর সিকিম সিকিমের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উত্তর সিকিম যেন সিকিমের সব সৌন্দর্য নিয়ে বসে আছে। উত্তর সিকিম প্রবেশ করার পর এক একটি স্থান যেন প্রকৃতির অকৃত্রিম সাজে একের পর এক স্বাগত জানাতে থাকে। উত্তর সিকিমকে দ্বিতীয় সুইজারল্যান্ড বললেও খুব একটা ভুল হবে না । উত্তর সিকিম একটা সময় ধরে যেমন সাদা বরফে আবৃত থাকে আবার বর্ষা মৌসুমে সবুজ সমারোহ আর ফুলে ফুলে স্বর্গ উদ্যানে পরিনত হয় চারপাশে। নর্থ সিকিমে বলতে গেলে প্রায় সারা বছর ঠান্ডা থাকে ।

গরম কালে সেখানকার তাপমাত্র ১০/১২ ডিগ্রি হয়ে থাকে যা আমাদের বাংলাদেশের শীতের তাপমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।  অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত সেখানে বরফ আর স্নোফলে দেখা পাওয়া যায়। উত্তর সিকিমের নয়নাবিরাম সৌন্দর্য সত্যি অকল্পনীয়।  উত্তর সিকিম ভ্রমণ করতে চাইলে স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সিকিম রাজ্য সরকারের অনুমতি ও ট্রাভেল প্যাকেজ নিয়ে ভ্রমণ করতে হয়। উত্তর সিকিম ভ্রমণে লাচুং গ্রামেই রাত কাটাতে হয়। যে প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রাভেল প্যাকেজ নেওয়া হয় তারাই থাকা ও খাওয়া ব্যবস্থা রাখেন। আর তাই উত্তর সিকিম ভ্রমণে কোন প্রকার ঝামেলা বা মাথা ঘামাতে হয় না ।  উত্তর সিকিমের লাচুং গ্রামে যাওয়ার পথে চুংথাং গ্রাম, নায়াগ্রফল, অমিতাভবচ্চনফল সহ আরো কয়েটি ছোট বড় ঝর্না ও মনোরম স্থান দেখতে দেখতে লাচুং গ্রামে প্রবেশ করতে হয়।

 ছাঙ্গু লেক বা Changu lake ছাঙ্গু লেককে সমু বা Tsomgo lake নামেও ডাকা হয়। সিকিমের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে পূর্ব সিকিমের এই ছাঙ্গু লেক বরফ আবৃত ও পাহাড় বেষ্টিত একটি  মনোরম জায়গা। গ্যাংটক থেকে ছাঙ্গু লেকের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার । ছাঙ্গু হ্রদ বা লেকটির সৌন্দর্য ভাষায় বলার মতো না । সিকিমের দর্শনীয় স্থান গুলোর ভিতরে ছাঙ্গু লেকও বেশ সুন্দর বলে পর্যটকরা একদিন সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারে।  

জগতে কিছু কিছু জায়গা আছে যা নিজে গিয়ে অনুভুব করে জানতে হয় ঠিক তেমনি একটি জায়গা ছাঙ্গু লেক বা Changu lake বা Tsomog Lake । গ্যাংটক থেকে ছাঙ্গু লেকের রাস্তা অসাধারণ সুন্দর, যত উপরে বা লেকের দিকে যায় তত ঠান্ডা বাড়তে থাকে ।  এছাড়া যেতে যেতে রাস্তায় বরফ আর স্নোফলের সাথে আনন্দে মেতে উঠতে পারেন। ছাঙ্গু লেক থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে বাবা হারবাজন সিং মন্দির অনুমতি পেলে একটু ঘুরে আসতে পারেন।  এই ছাঙ্গু লেকের জন্যও আলাদা করে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অনুমতি নিতে হয়।

 সিকিমে প্যারাগ্লাইডিং- আকাশে প্যারাসুট দিয়ে ভেসে বেড়ানোর আনন্দ বা অভিজ্ঞতা অন্য ধরণের অনুভূতি দিতে বাধ্য । প্যারাগ্লাইডিং করার  জন্য সিকিমের গ্যাংটক অনেক আদর্শ জায়গা হতে পারে।  প্যারাগ্লাইডিং করার জন্য সব থেকে আদর্শ সময় হচ্ছে সকালে কেননা সকাল বেলা লোকজনের চাপ কম থাকে এবং আর আবহাওয়াও থাকে চমৎকার। সেক্ষেত্রে  প্যারাগ্লাইডিং করার আগে আবহাওয়াটা দেখে নিন । শুষ্ক আবহাওয়াই প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য চমৎকার আর তাই সিকিমের দর্শনীয় স্থান গুলো দেখতে গিয়ে যদি আপনার কিছুটা দুঃসাহসিকতা থাকলে তাহলে এই প্যারাগ্লাইডিং করতে পারেন।

রুমটেক মোনাস্ট্রি/Rumtek Monastery- গ্যাংটক শহরের এমজি মার্গ থেকে রুমটেক মোনাস্ট্রর দূরত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার।  রুমটেক মোনাষ্ট্রি, এটি একটি তিব্বতীয় প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ বা বিহার যেটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৬শ শতাব্দীতে। প্রাচীন সব স্থাপত্য ও নিদর্শন রয়েছে এই মঠটিতে ।

জহুরুলাল নেহেরু বোটানিক্যাল গার্ডেন- এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি রুমটেক বৌদ্ধ মঠ থেকে প্রায় ৫০০মিটার দূরত্বে অবস্থিত। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই গার্ডেনটি । গার্ডেনটির অভ্যন্তরে প্রায় ৫০ প্রজাতির পরিবেশ বান্ধব গাছগাছালি ও প্রজননের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । রুমটেক মোনাস্ট্রি থেকে  রাস্তা ধরে  আসার পথে একটু নেমে হাতে বামে দুই তিন মিনিট উপরে উঠে দেখে আসতে পারেন এই বোটানিক্যাল গার্ডেন ও প্রজনন কেন্দ্রটি ।

গ্যাংটক রুপওয়ে বা Gangtok Ropeway-  সিকিমের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে রুপওয়ে করাটা অন্যতম একটি ব্যাপার। রুপওয়ে থেকে গ্যাংটক শহরের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।  রুপওয়ে বা ক্যাবল কার দিয়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে যেতে গ্যাংটকের অন্যিন্দ সুন্দর উপভোগ  করতে পারবেন ।  সকাল এগারোটা থেকে  দুপুর একটার মধ্যে রুপওয়ে করাটা সব থেকে ভালো। কেননা সেসময় আবহাওয়া অনুকূল থাকে যেজন্য দূর গ্যাংটক পাখির চোখে দেখতে পারবেন। জহুরুলাল বোটানিক্যাল থেকে আসার পথে দেওর আলী বাজারেই এই রুপওয়ে করার স্থান।   রাউন্ড ট্রিপের জন্য অর্থাৎ যাওয়া ও আসা করতে  জনপ্রতি খরচ গুণতে হবে ১৪৬ রুপি ।

তিব্বতীয় নামাগিয়াল জাদুঘর ও মোনাস্ট্রি /Namgyal Institute of Tibetology-  Namgyal Institute of Tibetology তে  বেশকিছু বৌদ্ধ ধর্মীয় পুরানিক ঐতিহ্য এবং প্রাচীন নিদর্শন রক্ষিত রয়েছে। দেওর আলী বাজারে রুপওয়ে করার পর গাড়ি করে মাত্র তিন মিনিটের পথ  অতিক্রম করলে যাওয়া যায় Namgyal Institute of Tibetologyতে। ২০ রুপি করে টিকিট কেটে প্রবেশ অনুমতি নিয়ে দেখে আসতে পারেন  তিব্বতীয় জাদুঘরটিকে । এছাড়া এই নান্দনিক বৌদ্ধ মোনাস্ট্রিটির বাহ্যিক কারুকার্য দেখলেও ভালো লাগবে।

তাশি ভিউ পয়েন্ট  বা Tashi View Point Gangtok- তিব্বতীয় নামাগিয়াল জাদুঘর ও মোনাস্ট্রি থেকে সরাসরি যেতে পারেন তাশি ভিউ পয়েন্টে। গ্যাংটক শহর থেকে প্রায় ৭.৩ কিলোমিটার দূরে এই Tashi View Point । সিকিমের দর্শনীয় স্থান ও গ্যাংটক সাইট সিনে তাশি ভিউ পয়েন্টকে অবশ্যই রাখবেন না হলে গ্যাংটক ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে।  এটি সূর্য উদয় এবং সূর্য অস্ত দেখার জন্য গ্যাংটকের একটি আদর্শ জায়গা হিসেবে পরিচিত ।  তাশি ভিউ  পয়েন্ট থেকে আকাশ পরিস্কার থাকলে দূর কাঞ্জনজঙ্ঘা পর্বত দেখা যায়। এছাড়া ‍দূর থেকে গ্যাংটক এবং তার  আশেপাশের স্থান গুলো দেখতে অসাধারণ লাগে ।  ১০ রুপি দিয়ে প্রবেশ অনুমতি নিয়ে কিছুক্ষন চমৎকার সময় পার করতে পারেন। এছাড়া ৮০ থেকে ১০০ রুপি দিয়ে সিকিমের ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় পোশাক সজ্জ্বিত হয়ে ভিডিও বা  ছবি তুলি স্মৃতি হিসেবে রাখতে পারেন । সিকিমের দর্শনীয় স্থান এ গিয়ে কিছুক্ষণ সিকিমের রাজকীয় অনুভূতি নিলে অবশ্যই মন্দ হবার কথা নয়।

গনেশটক মন্দির বা Ganesh Tok Gangtok- তাশি ভিউ পয়েন্ট থেকে গ্যাংটকের দিকে আসার পথে দেখে আসতে পারেন সিকিমের বিখ্যাত গনেশ টক মন্দির । সিকিমের দর্শনীয় স্থান দেখতে আসা পর্যটকরা এই মন্দিরটি দর্শন করে এবং সিকিমের  স্থানীয়দের কাছে খুবই পবিত্র আর মনের ইচ্ছাপূরণ হওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে তাদের চাওয়া গুলো মনে মনে উপস্থাপন করে থাকেন।

সিকিম হিমালয়ান জুয়োলজিক্যাল পার্ক বা Sikkim Himalayan Zoological Park- এই পার্কটি লাল পান্ডার জন্য বিখ্যাত এছাড়া নানান ধরনের বন্য প্রানী সহ অসংখ্য গাছাগাছালি ও লতাপাতার সমাহার এই পার্কটিতে।  গনেশ টক মন্দির থেকে নেমে সোজা উত্তর পাশেই Sikkim Himalayan Zoological Park থেকে ঘুরে আসতে পারেন । অবশ্যই আপনাদের বিকেল ৪ টার আগেই প্রবেশ করতে হবে । ৫ টার পর থেকে এই পার্কটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় ।

যাত্রাপথ হাওড়া, শিয়ালদহ কিংবা কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়া উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে এসে নামতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনে। সেখান থেকে গ্যাংটকের দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। বিমানে গেলে, বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে গ্যাংটক পৌঁছতে হবে, দূরত্ব ১২৪ কিলোমিটার। এখন সরাসরি গ্যাংটকের কাছাকাছি পাকইয়ং পর্যন্ত বিমান যাচ্ছে। ধর্মতলা থেকে ছাড়া বাসেও পৌঁছতে পারেন শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি এসএনটি (সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্ট) বাস টার্মিনাস কিংবা এনজেপি স্টেশন থেকে শেয়ার গাড়ি (মাথাপিছু ভাড়া ৩৫০-৪০০ টাকা), কিংবা বাসেও (মাথাপিছু ভাড়া ১২০ টাকা) পৌঁছতে পারেন গ্যাংটক। গ্যাংটক সাইট-সিয়িং করতে খরচ পড়বে ২৫০০-৩০০০ টাকা (পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে)। আর ছাঙ্গু-নাথুলা-বাবামন্দির ভ্রমণে মাথাপিছু ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা (তবে সিজন অনুসারে ভাড়ার যথেষ্ট তারতম্য হয় এই সফরে)।