উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Utpanna Ekadashi

উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য  Utpanna Ekadashi

 উৎপন্না একাদশী ব্রত Utpanna Ekadashi একাদশী হল হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে মাসের শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের একাদশতম চান্দ্র দিন (তিথি)।  প্রতিটি একাদশীর সময় চাঁদের অবস্থান অনুসারে নির্ণয় করা হয়  এটি হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়ভাবে পালিত হয়। অনুগামীরা উপবাস করে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে উপাসনা করে। বছরে সাধারণত ২৪টি একাদশী থাকে, এবং কখনও কখনও অধিবর্ষে দুটি অতিরিক্ত একাদশী হয়। ভাগবত পুরাণ বিষ্ণুর ভক্ত অম্বরীষের একাদশী পালনের কথা উল্লেখ করেছে।

একাদশী পুণ্যতিথি হিসেবে বিবেচিত। হিন্দুধর্মের, একাদশীর উপবাসের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল মন ও শারীরিক ইন্দ্রিয়গুলির উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে পরিচালিত করা। এছাড়াও, উপবাসের সাথে যুক্ত বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। একাদশীর দিন সূর্যোদয় থেকে পরের দিন সূর্যোদয় পর্যন্ত এই বিরতির সময়কাল উচ্চ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার যেমন মটরশুঁটি এবং রবিশস্যের পরিবর্তে শুধুমাত্র ফল, শাকসবজি ও দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়া হয়। 

Utpanna Ekadashi উৎপন্না একাদশী ব্রত কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যুধিষ্ঠিরকে একাদশীর গল্পের পাশাপাশি এই দিনে উপবাসের গুরুত্বও বলেছিলেন । সত্যযুগে মুরা নামে এক শক্তিশালী রাক্ষস ছিল । তিনি তার শক্তি দিয়ে স্বর্গ জয় করেছিলেন । কেউ তাকে থামাতে পারেনি, এমনকি ইন্দ্রদেব, বায়ু দেব এবং অগ্নিদেবও তার বিরুদ্ধে শক্তিহীন ছিলেন । তাই, তাদের প্রাণের জন্য মৃত্যু লােকে যেতে হয়েছিল ।

পরে দেবরাজ ইন্দ্র কৈলাস । পর্বতে  যান এবং ভগবান শিবের কাছে কাছে তার দুঃখের কথা জানান । তার সমস্যার কথা শুনে ভগবান শিব তাকে ভগবান বিষ্ণুর কাছে যেতে বললেন । সমস্ত দেবতা  ক্ষীরসাগরে পৌছান এবং ভগবান বিষ্ণুকে মুরা রাক্ষস থেকে রক্ষা করার জন্য অনুরােধ করেন । শ্রী হরি তাদের আশ্বাস দেন এবং তারা সবাই মুরা রাক্ষস (অসুর) নগরে তার সাথে যুদ্ধ করতে যান ।

বহু বছর ধরে ভগবান বিষ্ণু ও  দানব মুরার মধ্যে যুদ্ধ চলে । যুদ্ধ করার সময়, ঈশ্বরের ঘুম হয়, তাই তিনি বিশ্রামের জন্য একটি গুহায় যান । তাকে ঘুমোতে দেখে মুরা তাকে আক্রমণ করে । কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর দেহ থেকে একটি দেবী জন্ম নেয় এবং রাক্ষসের সাথে যুদ্ধ করে । এই লড়াইয়ের সময়, মুরা অজ্ঞান হয়ে যায় এবং দেবী একাদশী তার শরীর থেকে তার মাথা ছিন্ন করে । ভগবান বিষ্ণু জেগে উঠলে তিনি জানতে পারেন কিভাবে দেবী তাকে রক্ষা করেছেন । তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে, ঈশ্বর তাকে আশীর্বাদ করেন । তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তোমার উপাসনা করবে, তার সমস্ত পাপ বিনষ্ট হবে এবং সে মুক্তি লাভ করবে ।

একাদশী তিথির দিন ভগবান বিষ্ণুর বিধি-বিধানের সহিত পুজো করা হয়। সূর্যোদয়ের পূর্বে স্নান সেরে শুদ্ধ বসনে ভগবান বিষ্ণুর অভিষেক করুন গঙ্গা জল দিয়ে। পঞ্চামৃত, ফুল, ধূপ, দীপ, চন্দন, অক্ষত, ফল, তুলসী দিয়ে বিষ্ণুর পূজা শুরু করুন। শুধু সাত্বিক জিনিসের ভোগ দেওয়া উচিত ভগবানকে। বিষ্ণুর ভোগে অবশ্যই তুলসী পাতা দিতে হবে। মনে করা হয় যে বিনা তুলসিতে ভগবান বিষ্ণু কোনও দিনই ভোগ গ্রহণ করেন না।

সঠিক বিধি মেনে পূজার্চনা করুন। পূজা শেষে ভগবানের আরতি করতে হবে। এরপর উৎপন্না একাদশীর ব্রত কথা শুনুন।এ দিন বিষ্ণু সহস্ত্রনাম পাঠ করা অত্যন্ত ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি রাত জেগে ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করা উচিত। এই একাদশীতে ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে দেবী একাদশীর পূজা করলে ধন-সম্পদ ও সুখ-সমৃদ্ধি আসে। এই দিনে দান করলে বহুগুণ পুণ্য হয়।

একাদশী পালনের সাত্ত্বিক নিয়মগুলো হলো: সমর্থপক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, ও দ্বাদশীতে একাহার। অসমর্থপক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার। এছাড়াও, একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করে ফলমূলাদি অনুকল্প গ্রহণ।

নিষিদ্ধ রবিশস্য নিন্মে নিষিদ্ধ রবিশস্যসমূহ উল্লেখ করা হলো:  ধানজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – চাউল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খৈ ইত্যাদি।

গমজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি বা সকল প্রকার বিস্কুট, হরলিক্স ইত্যাদি। যব বা ভুট্টাজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি।

ডালজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মসুরি, ছোলা, অড়হর, ফেলন, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি। সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল ইত্যাদি। উপর্যুক্ত পঞ্চ রবিশস্যের যেকোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।

 সতর্কতা একাদশীতে শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ। সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম নিষিদ্ধ।