দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা | Dakshin Dinajpur district

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা | Dakshin Dinajpur district

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা Dakshin Dinajpur district পশ্চিমবঙ্গের মালদা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। ১৮ই চৈত্র ১৩৯৮ বঙ্গাব্দে ১৯৯২ সালের ১ এপ্রিল পশ্চিম দিনাজপুর জেলা দ্বিখণ্ডিত হয়ে ওই জেলার দক্ষিণাংশ নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর  গঠিত হয় Dakshin Dinajpur districtদক্ষিণ দিনাজপুর।

বালুরঘাট এই জেলার জেলাসদর। আজ থেকে প্রায় দুহাজার বছর আগেও আলাদাভাবে দিনাজপুর অঞ্চলের অস্তিত্ব স্পষ্ট হয়৷ জেলাটি পৌরানিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ৷ দিনাজপুর জেলা যেমন মৌর্য গুপ্ত পাল সেন যুগের ইতিহাস বহন করছে তেমনি ইসলামের আগমন এবং বৌদ্ধ ও জৈন সময়কালীন ঐতিহ্যে পূর্ণ৷

অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার প্রথম অস্তিত্বের উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীণ পুন্ড্র সাম্রাজ্যের একটি অংশ হিসাবে৷ পুন্ড্র সাম্রাজ্যে বসবাসকারী মুল উচ্চবর্ণীয়দের পুণ্ড্র বলা হতো যাদের ঐতরেয় ব্রাহ্মণদের বংশজ বলে মনে করা হয়৷

ঐতিহাসিকদের মতে পুন্ড্রবর্দ্ধন সাম্রাজ্যের রাজধানী মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ বর্তমান বগুড়া জেলার করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে পাওয়া যায় ৷ সাম্রাজ্যের অন্য নগরগুলি হল পুন্ডনগর ও কোটিবর্ষ৷ পুনর্ভবা নদীতীরে বর্তমান গঙ্গারামপুরের বাণগড়ই ছিলো প্রাচীন নথিতে উল্লেখিত কোটিবর্ষ নগর৷

খ্রীষ্টপুর্ব চতুর্থ শতকে মৌর্য সাম্রাজ্যকালে দিনাজপুর Dinajpur অঞ্চলে জৈন ধর্মের প্রসার ঘটে ৷ ভদ্রবাহু ছিলেন মৌর্যসম্রাট অশোকের জৈনগুরু যিনি দিনাজপুরের কোটিপুর নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, উল্লেখ্য এই কোটিপুরই বর্তমান Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর বলে প্রমাণ পাওয়া যায়৷ জেলাটির বিভিন্ন জায়গায় খনন করে প্রমাণ পাওয়া যায় যে সমগ্র পৌন্ড্রবর্দ্ধন সহ উত্তর বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা ছিলো মোর্যসাম্রাজ্যের শাসনাধীন৷

পরবর্তীকালে ষষ্ঠ শতক অবধি গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসন কায়েম হয়৷ এরপর পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল ও পরে তার উত্তরসূরী মহীপালের শাসনকালে এ অঞ্চলে একাধিক কুপ ও দিঘী খনন করা হয় যার প্রমাণ কুশমণ্ডি, গঙ্গারামপুর, বংশিহারী, তপন অঞ্চলে স্পষ্ট৷  ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে যখন বাংলার দেওয়ানী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন থেকে দিনাজপুর ব্রিটিশ শাসনের আওতাভুক্ত হয়৷

ব্রিটিশ শাসনের প্রথম দিকে মালদহের বামনগোলার মদনাবতীতে প্রথম নীল কারখানা স্থাপিত হয়৷ ১৭৯৮ খ্রীষ্টাব্দে উইলিয়াম কেরি কলকাতার পর প্রথম এই অঞ্চলে বাংলাতে বই ছাপানো শুরু করেন কিন্তু ১৭৯৯ তে নীল কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়৷অষ্টাদশ শতকের মধ্যেই সন্নাসী ফকিরদের জমি জায়গা দিয়ে দিনাজপুরে বিভিন্ন স্থানে বসতি করে দেওয়া হয়৷

পরে তারাই আবার সাধারণ মানুষর ওপর লুঠতরাজ শুরু করলে ইষ্ট ইন্ডিয়া কম্পানির তত্তাবধানে তার অবসান ঘটে৷১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহর সময় এই জেলা নিজ স্থান অক্ষুণ্ণ রাখে৷তেভাগা ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুরের অবদান অনস্বীকার্য৷  ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রথমবার বঙ্গভঙ্গের সময় এই জেলার জনগণ প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে।লাল মোহন ঘোষের নেতৃত্বে বৎসরকালীন বয়কট তথা জেলা রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামীণস্তরের সরকারী নীতির বিরোধীতা চলতে থাকে৷ মহারাজা গিরিজানাথ রায় তাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেন৷

১৯১৯ সনে জাতীয় কংগ্রেসের সহযোগীতায় সমান্তরাল প্রশাসন তৈরী করা হয় ও ১৯২৪ সনে শ্রী পুর্ণচণ্দ্র দাস গ্রেপ্তার হন৷ ১৯৪২ এ পুর্ণচণ্দ্র দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে বালুরঘাটে ভারতবন্ধ ডাকা হয়৷ ১৪ ই সেপ্টেম্বর শ্রী সরোজ রঞ্জন চ্যাটার্জ্জীর নেতৃত্বে বালুরঘাটে আট হাজার লোক জড়ো হয় ও সরকারী দপ্তরে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়৷দিনাজপুর জেলা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৯৪৭ সাালে বাংলা ভাগের সময়৷

বালুরঘাট, রায়গঞ্জ ও গঙ্গারামপুর মহকুমা ভারতীয় যুক্ত রাষ্ট্রে যুক্ত হলেও বাকী দিনাজপুর ও পূর্ববঙ্গে দ্বিখণ্ডিত থাকে দিনাজপুর ও রাজশাহীর মধ্যে।১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের দক্ষিণাংশের ২২১৯ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল তথা বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুর মহকুমাদ্বয় নিয়ে নতুন Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠিত হয়৷

বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুর এই দুটি মহুকুমা নিয়ে এই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠিত।

Dakshin Dinajpur districtদক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পূর্বদিকে অবস্থান বালুরঘাট মহুকুমার, এই মহুকুমা ৪ টি  সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত৷

বালুরঘাট Balurghat সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

৩০৭ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ১১ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত,  সেগুলি হল   পতিরাম, গোপালবাটি, অমৃতখণ্ড, চিঙগিশপুর, এক্স নজিরপুর,ভাটপাড়া, বোল্লা,  চকভৃগু,  দানগা, বোল্লা, বোয়ালদার, জলঘর ৷ সদরটি বালুরঘাট-এ অবস্থিত৷

বিদ্যেশ্বরী মন্দির বালুরঘাট থানার পতিরামের বহুকাল প্রাচীন কালী মন্দির আছে। মন্দিরটি বিদ্যেশ্বরী কালীমন্দির নামে পরিচিত। এখানে কোন মূর্তি নেই। একটি বেদীতে লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা দেওয়া আছে। লোকবিশ্বাস দেবী ভূগর্ভে অন্তর্নিহত আছে। জনশ্রুতি আছে ভবানী পাঠক (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় এর ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাস) এই মন্দিরে নিত্য পূজা দিতে আসতেন।এই স্থান দেবীর একান্নতম শক্তিপীঠ হিসেবে পূজিতা হয়ে আসছে। এটি দক্ষিণ দিনাজপুর এর অন্যতম স্থাপত্য পুরাকীর্তি।

কুমারগঞ্জ Kumarganj সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

২১৮ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত, সেগুলি হল ভউর, দেওর, জাকিরপুর, মোহনা,  বাটুন  রামকৃষ্ণপুর, সাফানগর, সমঝিয়া৷ সদরটি কুমারগঞ্জ-এ অবস্থিত৷

বৈদ্যনাথ ধাম

কুমারগঞ্জ ব্লকের আত্রেয়ী নদীর ধারে একটি মন্দিরে বৃহৎ শিবলিঙ্গ আছে । এটি বৈদ্যনাথ ধাম নামে পরিচিত। মন্দির স্থাপন এর একটি জনশ্রুতি আছে, স্থানীয় জমিদার দয়াময়ী চৌধুরীর পূর্বপুরুষগণ প্রায় ৩০০-৪০০ বছর পূর্বে বৈদ্যনাথ ধাম স্থাপন করেন। স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস যে এখানে পূজা দিলে আদি বৈদ্যনাথ ধাম যাওয়ার পুণ্য অর্জন করা যায় । এছাড়াও এখানে বারুণী স্নান উপলক্ষে মেলা বসে। বৈদ্যনাথ ধাম এসে বারুণী তিথি ও শিবরাত্রিতে আত্রেয়ী নদীতে স্নান করে মন্দিরে পুজো দিয়ে অগণিত ভক্ত পুণ্য অর্জন করেন ।

দেবগ্রাম

এটি কুমারগঞ্জ থানার অন্তর্গত। দেবগ্রাম অর্থাৎ দেবতার গ্রাম, যেখানে দেবদেবীর অধিষ্ঠান। এখানে ১০৭টি মন্দিরের কথা শোনা যায়। স্থানীয় জনশ্রুতি যদি ১০৮ টি মন্দির থাকতো তবে এটি কাশীধাম বলে পরিচিত হত। মোহনা, দেবগ্রাম, দাউদপুরে একাধিক মন্দির আছে। ভগ্নপ্রায় মন্দির গুলোতে কিছু টেরাকোটার কাজ ও রয়েছে। এই অঞ্চল থেকে বেশকিছু গৌরীপটও পাওয়া গেছে। দেউলময় দেবগ্রামে কিংবদন্তি ও ইতিহাস হাতছানি দেয়।

ব্রহ্মপুর দীঘি

কুমারগঞ্জ থানার গোপালগঞ্জে অবস্থিত ব্রহ্মপুর দীঘি। ব্রহ্ম হলেন বিশ্বআত্মা। বৈদিক সাহিত্যে ব্রহ্ম অর্থ কোথাও ব্রাহ্মণ কোথাও ব্রাহ্মণত্ব। আবার বেদবাক্য অর্থে ব্রহ্ম। কথিত যে ব্রহ্ম নামে এক মহাবীর গভীর জঙ্গলাকীর্ণ এই অঞ্চলে বসবাস করতেন। অন্ধকারাচ্ছন্ন এই গ্রামে তিনি বিভিন্ন ধর্মের মানুষজনকে এনে বসতি গড়ে দেন।

কিন্তু ওই গ্রামে জল কষ্ট ছিল। জলকষ্টে গ্রামে হাহাকার ওঠে। গ্রামবাসীরা সমবেত হয়ে মহাবীর ব্রহ্মের কাছে জলকষ্ট নিবারনের জন্য প্রার্থনা করেন। ব্রহ্মের কৃপায় মহাবীর জলকষ্ট নিবারণের জন্য একটি দীঘি খনন করে গ্রামবাসীদের উৎসর্গ করেন। গ্রামবাসীরা মহাবীর ব্রহ্মকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে জনপদের নামকরণ করে ব্রহ্মপুর। দীঘির নাম হয় ব্রহ্মপুর দীঘি। প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দীঘি গুলোর খননের পেছনে নানা মৌখিক ইতিহাসের গল্প আছে।

হিলি Hili সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

৮২ গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৫ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত, সেগুলি হল হিলি, পানজুল,বিনশিরা, জামালপুর, ধলাপাড়া৷ সদরটি হিলি-তে অবস্থিত৷

হিলি চামুণ্ডা মন্দির

ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তে যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন শহর হিলি। এখানে জমিদার প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাচীন মন্দির আছে। মা চামুণ্ডা এখানে পূজিতা । প্রায় ২০০ বছর পূর্বে হিলির আদি জমিদার রমণ ধর এই মন্দির স্থাপন করেন। চামুন্ডা দেবী প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে একটি কিংবদন্তী আছে।

জমিদারের একটি হাতি একদিন স্থানীয় নদীর ঘাটে স্নান করতে গিয়ে শত চেষ্টার পরও আর উঠতে পারে না। সেই রাত্রে জমিদারের স্বপ্নাদেশ হয় যে,দেবী চামুণ্ডা দুটি শিলাখণ্ডের উপর ওই স্নানের ঘাটে আবির্ভূতা হয়েছেন।পরদিন সকালে ঘাটে গিয়ে দুটি শিলাখণ্ডের উপর একটি নিম কাঠের খণ্ড দেখতে পান ।

জমিদার কাঠ খণ্ডটি দিয়ে চামুন্ডার মুখা তৈরি করিয়ে কাছারিবাড়ির অনতিদূরে ফুল বাগানে মন্দির নির্মাণ করিয়ে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন।পরবর্তীতে ওই স্থানে আরও কয়েকটি দেব-দেবী স্থাপন করে তিনি একটি মন্দির তৈরি করেন । এই স্থানে এখন ফুলবাগান নেই, কিন্তু মন্দিরটি “ফুলতলার মণ্ডপ” নামে পরিচিত। প্রতি বৎসর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শনিবার মহা আড়ম্বরে মা চামুণ্ডা দেবীর পুজা হয়। মন্দিরটি পরবর্তীতে সংস্কার করা হয়েছে ।

তপন Tapan সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

২৭৯ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত , সেগুলি হল হজরতপুর, রামচন্দ্রপুর, রামপাড়া চেঞ্চরা, আচমতপুর, আউটিনা, গুরাইল, তপন,  হেরখুড়া, দীপখণ্ড, গোফানগর, মালঞ্চ৷ সদরটি তপন-এ অবস্থিত৷

বাসিনী দেবী মন্দির  Basini Devi Temple  তপন থানার ভিকাহারে রয়েছে প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি প্রাচীন মন্দির বাসিনী দেবীর মন্দির। জনশ্রুতি এক তান্ত্রিক এখানে তন্ত্র চর্চা করতেন। তিনি সিদ্ধি লাভের জন্য একটি মেয়েকে মন্দিরের বেদীর জায়গায় গর্ত করে সমাহিত করেন। লোকশ্রুতি গভীর রাতে মন্দির চত্বর থেকে ধূপ, ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়। সেই গন্ধ কারও খারাপ লাগলে সেই পরিবারের ক্ষতি হয়। বর্তমানে অমাবস্যার কালীপুজোর দিন সোয়া হাত মাটির কালীমূর্তি পূজিত হয়।

পোড়াগাছির মন্দির   তপন থানার জামতলা থেকে উত্তর দিকে গেলে চকমধুসূদনপুর। এটাই পোড়াগাছি নামে পরিচিত। এখানে একটি সুন্দর টেরাকোটার মন্দির আছে। আনুমানিক ষোড়শ বা সপ্তদশ শতকে তৈরী। মাঝখানে দুর্গা মন্দির, তার দু’দিকে কালী ও দধিবামন ঠাকুরের মন্দির আছে।

শোনা যায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত করার সময় ১০৮টি মোহর ভরা কলসি নিবেদন করা হয়েছিল। পূর্বে এখানে মূর্তি পূজা করা হতো। জনশ্রুতি ভোগ দেওয়ার সময় একটি অল্প বয়স্ক মেয়েকে দেখতে পাওয়া যায়। এরপরই দেবীমূর্তির মুখে চুলের খোপা লেগে থাকার জন্য এখানে মূর্তি পুজো বন্ধ হয়ে যায়। এখানে মিথ, কিংবদন্তি, জনশ্রুতি, পুরাকথা সব মৌখিক ইতিহাসে রূপান্তরিত হয়েছে।

তপন দীঘি পাল-সেন যুগের স্মৃতি ও শ্রুতি নিয়ে আজও বহমান তপন দীঘি। ইংরেজ সাহেবদের বর্ণনায় এই দীঘির উল্লেখ আছে। তপন দীঘিকে অনেকে তর্পণ দীঘিও বলে। সেন রাজা লক্ষণ সেনের তর্পণঘাট লিপি তপন দীঘির পাড়েই পাওয়া গেছে।

এই দীঘিকে ঘিরে নানা জনশ্রুতি, কিংবদন্তি আছে। যেমন- (১) এক সময় তপন দীঘির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল প্রভাবশালী পরশুরামের শাসনাধীন ছিল। পরশুরাম ছিলেন শিব ভক্ত ব্রাহ্মণ। মহাদেব তাকে পরশু (কুঠার) দান করেছিলেন। এদিকে চিত্ররথ নামে জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ প্রণয়ে লিপ্ত হলে পিতৃ (জন্মদগ্নি) আদেশে পরশুরাম নিজ মাতাকে হত্যা করেন।

পরে অনুতাপে তর্পণ দীঘির পাড়ে তপস্যা করতে থাকেন। (২) অসুররাজ বাণ নামে একজন রাজা তপন দীঘিতে তর্পণ করতেন। রাজা বাণ এই দীঘির তীরে প্রার্থনার দ্বারা শিবকে সন্তুষ্ট করতে ৯৯৯ টি হাত কেটে দেন। পরবর্তীকালে বাণ রাজার বিরুদ্ধে প্রজারা বিদ্রোহ করে তাকে পরাজিত ও নিহত করে।

নিহত সেনাদের আঙ্গুল কেটে তপন থানার করদহ নামক স্থানে দাহ করা হয়। একথাও শোনা যায় যে বাণ রাজা রানীর নির্দেশে এই দীঘি খনন করেন। যাইহোক উনিশ শতকের প্রথম দিকে বুকানন হ্যামিল্টন তপন দীঘির মাপযোগ করেন। লক্ষণ সেনের লিপি থেকে জানা যায় যে দীঘিটি ১১৮১ খ্রিস্টাব্দে খনন করা হয়। দীঘির পাড় জুড়ে শুধুই ইতিহাসের গন্ধ।

মায়ের থান

তপন থানার ভিকাহারের পশ্চিমে ফকিরপাড়া থেকে একটু দূরে ভায়োরের মায়ের থান। অনেকে বলেন ভায়োর কালী। আবার কেউ কেউ বলেন ডাকাত কালী। এখানে একাদশ / দ্বাদশ শতকের একটি দশভুজার মূর্তি আছে। মূর্তিটি সম্পর্কে নানা কথা শোনা যায়। কেউ বলেন বেলে পাথরের তৈরী দশভূজা দুর্গা মূর্তি।

আবার অনেকে বলেন ভৈরবের মূর্তি। গ্রামে গঞ্জে আজও অনেক দেবী মূর্তি দেব মূর্তি হিসেবে পূজিত হচ্ছেন। আবার উল্টোটাও হচ্ছে। মন্দির ও মূর্তি নিয়ে তিনটি লোকশ্রুতি আছে। একটি জনশ্রুতি কালো পাহাড়ের আক্রমণে এই মন্দির ও মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর একটি প্রচলিত গল্পগাথা  ধাসন বিলের ওপারের গ্রাম শালগাঁও থেকে এই মন্দিরের দেবী রাতারাতি পোতাহারের এখানে উঠে আসেন।

শোনা যায়  দেবী চৌধুরানী পুনর্ভবা নদী দিয়ে বাংলাদেশের দিকে যাওয়ার সময় এই জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এই মন্দিরে পুজো দেন। তবে একথা ঠিক যে অখন্ড দিনাজপুর তথা বৃহত্তর উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দেবী চৌধুরানীর নিবিড় যোগাযোগ ছিল। এই ভাবেই মৌখিক ইতিহাস আঞ্চলিক ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরে আছে।

শকুনি কালী মন্দির

তপন ব্লকের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত অর্জুনপুর গ্রামে প্রাচীন একটি টেরাকোটার মন্দির আছে। এটি শকুনি কালীমন্দির নামে পরিচিত।মন্দিরের গায়ের টেরাকোটা গুলো অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেলেও যে পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে একথা জোর করে বলা যায়।

করদহের শিব মন্দির

তপনের একটি প্রাচীন গ্রাম করদহ। এখানে প্রাচীন পুরাকীর্তির অনেক নিদর্শন রয়েছে। তারমধ্যে শিব মন্দির উল্লেখ্য। কিংবদন্তি হলো,বাণ শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধে বাণ রাজার ১০০০ হাতের মধ্যে ৯৯৮ টি হাত কাটা যায়। এই স্থানে দাহ করা হয় বলেই এই স্থানের নাম হয় করদাহ বা করদহ।

এখানে দিনাজপুর রাজ প্রাণনাথ প্রতিষ্ঠিত “গোপাল জিউ মন্দির” ছিল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে । অষ্টাদশ শতকের প্রথমদিকে প্রাণনাথ রায় প্রতিষ্ঠিত টেরাকোটার কারুকার্য বিশিষ্ট একটি শিব মন্দির আছে । এই মন্দিরটি করদহের শিব মন্দির নামে পরিচিত । অর্ধভগ্ন মন্দিরের গায়ে সুন্দর নকশা করা । রাম – লক্ষণ – সীতা ও হনুমানের মূর্তি খোদাই করা আছে। এখানেই প্রাচীন কষ্টি পাথরের বৌদ্ধ মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল এক শতাব্দী পূর্বে । এছাড়াও অনেক প্রস্তরখণ্ড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে । কেউ মালকালী, কেউ সুর-কালী রূপে পূজিতা হন।

বালুরঘাট Balurghat মহুকুমার পৌরসভাটি হলো বালুরঘাট৷

Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পশ্চিম দিকে অবস্থিত গঙ্গারামপুর মহুকুমা , এই মহুকুমা   ৪ টি  সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত৷

কুশমন্ডি Kushmandi সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

২৩১ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৮ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত ,  সেগুলি হল কালিকামোড়া, দেউল,কুশমণ্ডি, করঞ্জ, উদয়পুর,  বেড়াইল, আকচা,  মাটিগাঁও৷ সদরটি কুশমণ্ডি-তে অবস্থিত৷

করঞ্জী   

শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন চক্রে যখন কংসরাজের দেহ খণ্ডিত হয় তখন তার একটি অংশ কুশমন্ডি থানার করঞ্জী গ্রামে পড়েছিল। করঞ্জীতে রয়েছে অজস্র পুরাকীর্তি। অনেকে একে পাল রাজা ধর্মপাল এর রাজধানী করঞ্জা বলে অনুমান করেন। এখানে ত্রয়োদশ শতকের একটি ত্রি বিক্রমের মূর্তি পাওয়া গেছে। প্রতিবছর মাঘ মাসের পূর্ণিমাতে এখানে কংসব্রত উৎসব পালিত হয়। এখানে লোকশ্রুতি ও জীবনসংস্কৃতি মিলে মিশে গেছে।

মহীপাল দীঘি 

Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমন্ডি থানার অন্তর্গত মহীপাল দীঘি পাল রাজা মহীপালের স্মৃতিবিজরিত। লোকশ্রুতি, বরেন্দ্র বিজয়ের পর রাজা মহীপাল স্থির করেন যে তিনি প্রজাদের মঙ্গলের জন্য একটি দীঘি খনন করবেন। মহারাজ তার মা’কে প্রস্তাব দেন যে তিনি একনাগাড়ে যতদূর হেঁটে যাবেন ততদূর পর্যন্ত দীঘি খনন করা হবে।

রাজমাতা হাঁটতে শুরু করলেন কিছুদূর যাওয়ার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর পুত্র কয়েক ফোঁটা সিন্দুর জল মায়ের পায়ে ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, মা তোমার পায়ে রক্ত লেগে আছে। রাজমাতা হাঁটা বন্ধ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে গেলেন। দীঘির শেষ সীমানা চিহ্নিত হয়ে গেল। এরকম কত গল্পগাথা ইতিহাসকে জড়িয়ে আছে। এভাবেই মৌখিক গল্পগাথা ইতিহাসে ঢুকে জীবনসংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে।

পঞ্চমুন্ডি বাণলিঙ্গ

কুশমন্ডি ব্লকের আমিনপুর গ্রামে ৩০০ বছরেরও পুরনো মায়ের থান মাটিয়া কালীর। দিনাজপুর রাজা প্রাণনাথ এর সমকালীন জমিদার ছিলেন রাজা রাঘবেন্দ্র রায় । হরিপুর এষ্টেটের বড় তরফ জমিদার রাঘবেন্দ্র রায় সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে স্বপ্নাদেশে পুজা শুরু করেন।

আমিনপুর ছিল জমিদার বাড়ির কাছারি বাড়ি। কোন মন্দির নেই । খোলা আকাশের নিচে মায়ের বেদী। রাঘবেন্দ্র রায়ের পরবর্তী প্রজন্ম রবীন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী মন্দির করার আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু তার স্বপ্নাদেশ হয় ওই স্থানে মন্দির নির্মাণ করলে তিনি সবংশে ধ্বংস হবেন । তাই আর পাকা মন্দির নির্মাণ হয়নি ।পঞ্চ বৃক্ষ তলে কার্তিকী অমাবস্যা তথা দীপাবলির রাতে মায়ের পুজো হয়।

মন্দির নির্মাণ বন্ধ হলে ১২১১ বঙ্গাব্দে ৭ই জ্যৈষ্ঠ ভূপশ্রী গৌরী প্রসাদ অনতিদূরে শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের ভেতরে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গটি ভারতবর্ষের মধ্যে বিরল প্রকৃতির। শিবলিঙ্গের উপরিভাগে শিবের পাঁচটি মুখমণ্ডল । এটি পঞ্চমুখ বা পঞ্চমুন্ডি বাণলিঙ্গ নামে পরিচিত । এই কষ্টিপাথরের বাণলিঙ্গের দুই পাশে দুটি শ্বেত পাথরের শিবলিঙ্গ স্থাপন করা আছে । কাল অতিক্রমে মন্দির ভগ্ন হলে জমিদারের পরবর্তী প্রজন্ম বিপ্লবেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী মন্দিরের পুনঃসংস্কার করেন ১৪০৯ বঙ্গাব্দে।

অষ্টনাগ মূর্তি

কুশমন্ডি ব্লকের একটি প্রাচীন গ্রাম আমলাহার। গ্রামের মধ্যে বড় বড় অনেকগুলি পুকুর আছে । পুকুর খনন বা সংস্কার কালে প্রায়ই উঠে আসে প্রাচীন মূর্তি। সম্প্রতি একটি বিষ্ণুমূর্তি পাওয়া গেছে। এখানেই প্রাচীনকালে প্রাপ্ত অষ্টনাগ মূর্তি, বিষ্ণু মূর্তি ও শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে। মূর্তিগুলি একটি ভিটের মধ্যে স্থাপন করা আছে। মূর্তিগুলো পুরোপুরি ভগ্ন। শিবলিঙ্গটির শুধু গৌরীপট রয়েছে।

অষ্টনাগ মূর্তিটি বেশ কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত। গ্রামের পুকুর নিয়ে শোনা যায় জনশ্রুতি। ভোজের আয়োজন হলে এদের মধ্যে একটি পুকুরে আবেদন জানাতে হবে। পুকুর থেকে খাওয়া দাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বাসন-কোসন ডাঙায় উঠে আসতো। অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উপলক্ষে মনসা পুজা হয়। মনসা এখানে “মনসা বুড়ি” নামে অভিহিত।

ছাঁটিকাদেবীর মন্দির ও ভীম দেউল

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার Dakshin Dinajpur district কুশমণ্ডির করঞ্জি গ্রামে ছাঁটিকা দেবীর মন্দির ও ভীম দেউল আছে। এটি স্থাপত্য পুরাকীর্তি -র দৃষ্টান্ত ছাঁটিকা দেবীর পুজা উপলক্ষে কংস ব্রত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়রা কাস -ব বলে অভিহিত করেন। কিংবদন্তী আছে, পুরাকালে কংস রাজা শক্তিরূপিণী ছাঁটিকা দেবীর পুজা করে দেশের মঙ্গল করতেন।

ছাঁটিকা দেবীর মূর্তি ছাড়াও বিষ্ণুমূর্তি, লক্ষ্মী ও গৌরীপট্টহীন শিবলিঙ্গ আছে। মূর্তিগুলি প্রস্তর নির্মিত। মন্দিরের অনতিদূরে পুরাতন স্তুপ বা দেউল চোখে পড়ে। এটি ভীম দেউল নামে পরিচিত। ইতিহাসবিদরা মনে করেন বরেন্দ্রী বিজয়ী কৈবর্ত্য রাজা ভীমের রাজধানী ছিল এখানে। তিনি দিনাজপুর জেলায় দেবতারূপে পুজা পান।পুজাটি মাঘী শুক্লা ত্রয়োদশীতে শুরু হয়ে কৃষ্ণ প্রতিপদে পূর্ণাহুতি দিয়ে পুজা শেষ হয়।

নড়বড়িয়া শিব মন্দির

কুশমন্ডি ব্লকের বেতাহাড়ের নড়বড়িয়া শিব ব্যতিক্রম। গৌরীপট্টের মধ্যে ঘোরানো যায়। ব্রতীরা দুধ- জল ঢেলে একটু ঘুরিয়ে দিতে পারলেই ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। শিবলিঙ্গটি ঘোরানো বা নড়ানো যায় বলে এর নাম হয়েছে নড়বড়িয়া শিব।টাঙ্গন নদীর পশ্চিম পাড়ে নড়বড়িয়া ধাম।যা

দিনাজপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন শিব মন্দির এবং পূর্ব পাড়ে চৌষা মৌজায় প্রাচীন মশনা কালী মন্দির। লোকশ্রুতি আছে, দুই পাড়ের দুই ঠাকুরের সম্বন্ধ গভীর। কেউ যদি নড়বড়িয়া শিবের পুজা দেয় তাহলে মশনাকেও পুজা দিতে হয়।নড়বড়িয়ার মাথা উত্তর-পূর্ব দিকে অর্থাৎ মশনার দিকে ঝুঁকে আছে অনেকে মনে করেন ।

আবার অনেকের ধারণা যেহেতু মা কামাখ্যা মায়ের মন্দির শিব নড়বড়িয়া মন্দির থেকে উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থান করছে। তার জন্য সেইদিকে শিবলিঙ্গ ঝুঁকে আছে।অনেক দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন পুত্র সন্তান কামনা করে বা অসুখ বিসুখ থেকে ভালো হতে। শিবরাত্রির দিন থেকে নদীর দুই পাড়ে বিরাট মেলা বসে । ক্ষেত্রসমীক্ষা থেকে অনুমান করা যায় এটি গৌড়বঙ্গের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবরাত্রি মেলা।

গঙ্গারামপুর Gangarampur সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

২০২ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ১১ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত , সেগুলি হল   গঙ্গারামপুর, দামদামা, নন্দনপুর, বেলবাড়ি-১ ও ২, উদয়, বাচুরিয়া,  অশোকগ্রাম,শুকদেবপুর, চালুন, জাহাঙ্গিরপুর, ৷ সদরটি গঙ্গারামপুর-এ অবস্থিত৷

বাণগড়

  দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার Dakshin Dinajpur district সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরাক্ষেত্র হলো গঙ্গারামপুর থানার রাজিবপুর মৌজার বাণগড়। পৌরাণিক কাহিনী থেকে শুরু করে জনশ্রুতি, লোকশ্রুতি কিংবদন্তি, মৌখিক ইতিহাস ও পুরাকাহিনীর বিচিত্র সমাহার বাণগড় ঘিরে। বাণগড়ের ইতিহাস সুপ্রাচীন। বাণগড়, বাণরাজা, ঊষাহরণ, ঊষাতটি, কালদীঘি, ধলদীঘি নিয়ে মৌখিক ইতিহাসের রত্নভান্ডার রয়েছে সমগ্র বাণগড় জুড়ে।

জনশ্রুতি, লোকশ্রুতি ও পুরাকথার আকর ভূমি বাণগড়। বাণগড় নামের সঙ্গে জুড়ে আছে রামগড়, কোটিবর্ষ, বানপুর, শোণিতপুর, উমা বন, ঊষা বন, পুন্ড্রবর্ধন, বরেন্দ্রভূমি, দেবকোট বা দেবীকোট তথা আরও অনেক নাম। সব নামের মধ্যে রয়েছে ইতিহাসের মিষ্টি গন্ধ। বলিরাজের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বাণ এই অঞ্চল শাসন করতেন। পৌরাণিক রামগড়ের সঙ্গে অসুররাজ বাণের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা উচিত যে একসময় কোটিবর্ষে ভেত্রবর্মণ নামক একজন শাসককে পাওয়া যায়। যাইহোক বাণের নামে রাজ্যের নাম হয় বাণগড়।

ঊষা/ ঊষাহরণ/ ঊষাতিটি

বাণ রাজার কন্যা ঊষা শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধের প্রতি প্রেমাসক্ত হন। শেষে বান রাজার মেয়ে ঊষার সঙ্গে অনিরুদ্ধের বিবাহ সম্পন্ন হয়। অনিরুদ্ধ ঊষাকে হরণ করে নিয়ে গিয়ে বিবাহ করেন। বর্তমানে একটি সড়ক রয়েছে যার নাম ঊষা হরণ সড়ক। পুনর্ভবা নদীর বিপরীতে একটি জমিতে একটি উঁচু স্থান আছে। অনেকে একে উষাতিটি বলে অর্থাৎ ঊষার বাড়ি।

বাণগড়ে চারটি গ্রানাইটের স্তম্ভ রয়েছে এগুলিকে অনেকে ঊষা-অনিরুদ্ধ -এর বিয়ের ছায়া মন্ডপ বলে। ভিন্নমতে এটি একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। এ. এস. আই. এর উদ্যোগে অধ্যাপক কুঞ্জগোবিন্দ গোস্বামীর নেতৃত্বে যখন প্রত্নখনন (১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে) শুরু হয় তখন নানা পুরা বস্তু উঠে আসে। বাণগড়ের একটি ঢিবি থেকে খননের সময় কিছু মাটির থালা, ভাঙ্গা গ্লাস উঠেছিল, একজন বয়োজ্যৈষ্ঠ মহিলা বলেছিলেন ঊষা-অনিরুদ্ধ -এর বিয়েতে প্রচুর লোকজন নিমন্ত্রন খেয়েছিলেন।ঐসব থালা, গ্লাস তারই স্বাক্ষ্য বহন করে। এই সব মৌখিক কথা কখনো কখনো ইতিহাসের আলোচনার উপজীব্য হয়ে ওঠে।

কালদীঘি

বাণগড় সংলগ্ন অঞ্চলে দুটো দীঘি আছে – কালদীঘি ও ধলদীঘি। লোকশ্রুতি যে বাণরাজার সহধর্মিনী কালোরানী। তার নাম থেকেই দীঘির নাম কালদীঘি। দেবকুল ও অসুরকুলের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। বাণরাজা অনিরুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ও যুদ্ধে পরাজিত হন।

এই সময় বাণের পুত্র সম্বর নগরবাসীকে জলপথে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। কালোরানী শেষবারের মতন রাজপ্রাসাদের দিকে তাকিয়ে ময়ূরপঙ্খীতে ওঠেন। তখন শত্রুরা চারিদিকে ঘিরে ফেলেছে। কালোরানী হুকুম দিলেন ময়ূরপঙ্খীর পাটাতন খুলে দিতে। মাঝিরা পাটাতনের কাট কাঠ খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজকীয় নৌযানের ভিতর হুঁ হুঁ করে জল ঢুকতে থাকে। ধীরে ধীরে নৌকা জলের মধ্যে ডুবে যায়। এইভাবে কালোরানী দীঘিতে আত্মঘাতী হন।

বুড়াপীর

গঙ্গারামপুর থানার নারায়ণ পুর মৌজার পিরপাল গ্রামে রয়েছে বুড়াপীর এর সমাধি। এখন প্রশ্ন এই বুড়াপীর কে? এই প্রশ্নের দুটো অভিমুখ। এক – অনেকে বলেন এই মাজার পীর বাহাউদ্দিনের। দুই – এই মাজার বুড়াপীর ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির। জনশ্রুতি দেবকোটে বখতিয়ার মারা গেলে তাকে পিরপাল গ্রামে সমাধিস্থ করা হয়। প্রতিবছর পীরের এই মাজারে বিশেষ পুজো হয়।

অনেকে মানত করে। পীরের মাজারে চাদর চড়ায়, মাটির ঘোড়া মানত করে, সিন্নি উৎসর্গ করে। এখানে একটা প্রথা আছে যেহেতু বুড়াপীর শুয়ে আছে সেজন্য এখানকার অনেকে এখনও খাট বা চকিতে শোয় না, মাটিতে ঘুমায়। একজন দুর্ধর্ষ তুর্কী বীর বখতিয়ার কিভাবে পীর-এ রূপান্তরিত হলেন সেটা অনেককেই ভাবায়।

পঞ্চরত্ন মন্দির

গঙ্গারামপুর ব্লকের মাহুর কিসমত গ্রামে প্রতিষ্ঠিত স্থাপত্য পুরাকীর্তি হিসাবে একটি প্রাচীন টেরাকোটার মন্দির; যা পঞ্চরত্ন মন্দির নামে পরিচিত । মন্দিরটি নির্মাণ কাল নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। কেউ বলেন অষ্টম শতকের আবার কেউ সপ্তদশ বা অষ্টাদশ শতকের কোন একসময়ের অনুমান করেন। মন্দিরের পাঁচটি চূড়ার মধ্যে দুটি ইতিমধ্যে ভেঙে পড়েছে।

প্রাচীন এই পঞ্চরত্ন মন্দিরের সারা গায়ে বিশেষত প্রবেশদ্বার সংলগ্ন দেওয়ালে বিষ্ণুর দশটি অবতারের ছবি ও অন্যান্য দেব-দেবীর ছবির সাথে সাহেব মেম এর ছবি ও স্থান পেয়েছে। অতীতে প্রাচীন এই মন্দিরে শিবের পূজা হলেও বর্তমানে বিষ্ণুর পূজা হয়। মন্দিরের ভেতরে কোন মূর্তি নেই । টেরাকোটার এই প্রাচীন মন্দিরটি প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মাঝে ক্রমশ ধ্বংসের মুখে এগিয়ে চলেছে।

বংশিহারী Banshihari সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

১৬১ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৫ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত ,  সেগুলি হল গাঙ্গুরিয়া, শিবপুর, এলাহাবাদ, ব্রজবল্লপুর,  মহাবাড়ি৷ সদরটি বংশিহারী-তে অবস্থিত৷

হরিরামপুর Harirampur সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

১৫১ টি গ্রামের সমন্বয়ে তথা ৬ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত,    সেগুলি হল সঈদপুর, পুন্ডরী,  সিরসি, গোকর্ণ, বাইরহট্ট, বাগিচাপুর ৷ সদরটি হরিরামপুর-এ অবস্থিত৷

আলতা দীঘিঃ জেলার হরিরামপুর থানার বৈরাট্টা গ্রামে অবস্থিত আলতা দীঘি (জে. এল. নং – ৪, ছোট মহেশপুর)। দৈর্ঘ্য ১২৮০ এবং প্রস্থ ২৭০ গজ। আলতা দীঘিকে নিয়ে রয়েছে নানা লোকগাথা। দীঘির অদূরে বাস করেন বুড়িকালী। তিনি প্রতিবছর কার্তিক মাসে একবারই আলতায় রাঙিয়ে দীঘির ওপর দিয়ে নৃত্য করতে করতে তাঁর মাসির বাড়ি কুকড়ামনি যান। দীঘির সমস্ত জল বুড়িকালীর আলতা মাখা পায়ে লাল হয়ে যায়। কার্তিক মাসে বুড়িকালীর মেলা উপলক্ষে প্রচুর নারী দীঘির ধারে দু’পা আলতায় রাঙিয়ে দীঘির জল স্পর্শ করেন। তখন আলতা দীঘির জলের কিছুটা অংশ জুড়ে আলতার মত লাল হয়ে যায়।

শমীবৃক্ষঃ হরিরামপুরের বৈরাট্টাতে রয়েছে সুপ্রাচীন শমীবৃক্ষ। জনশ্রুতি, পান্ডবরা বিরাট নগরে (বর্তমানে বৈরাট্টা) প্রবেশের সময় তাদের অস্ত্রশস্ত্র শমীবৃক্ষে লুকিয়ে রেখেছিল। মহাভারতে উল্লেখ আছে –তবে এই শমীবৃক্ষকে নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে।

এর বয়সও নিয়ে বিতর্ক। এটা কি প্রজাতির গাছ তা নিয়েও বিতর্ক। অনেকে বলেন তমাল গাছ। অনেকে বলেন মেদিনীপুর অঞ্চলে এই গাছ দেখা যায়। কিন্তু জনশ্রুতি, লোকশ্রুতি, কিংবদন্তি ও মৌখিক ইতিহাসে আজও এটি শমীবৃক্ষ।

বুড়িকালী মন্দির

হরিরামপুর ব্লক এর বৈরহাট্টা গ্রামে দুশো বছরের পুরনো বুড়ি কালীপূজা । প্রথমে গড়দিঘির পাড়ের জঙ্গল ঘেরা ফুলতলা নামক স্থানে পূজা শুরু করেছিলেন। পরে সরিয়ে আনা হয় বৈরহাট্টা এলাকায়। মন্দিরে কোন মূর্তি নেই। পরিবর্তে রয়েছে কাঠের তৈরি বুড়াবুড়ির মুখোশ। বুড়াবুড়ি এখানে চন্ডী বা দুর্গা হিসেবে মনে করেন । এছাড়াও এখানে স্থাপত্য পুরাকীর্তি বিশেষ করে প্রাচীন অনেক মূর্তি পাওয়া গেছে।

উত্তরবঙ্গে প্রথম যে দুটি সূর্য মূর্তি পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটি এই বৈরহাট্টা গ্রামেই পাওয়া গেছে। তপনের হলিদানায় অঞ্চলে একটি মন্দিরে গণেশ মূর্তি ও ভিকাহার মকদমপুর এলাকায় ভগ্ন লক্ষ্মী মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি ভাইওর এর হাটদিঘিতে একটি পুকুরে প্রাচীন কালো কষ্টিপাথরের সূর্যমূর্তি পাওয়া গেছে। মূর্তিটি একটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাড়িতে স্থাপন করে পূজা দেওয়া হয়।

গঙ্গারামপুর Gangarampur  মহুকুমা পৌরসভাটি হলো গঙ্গারামপুর৷

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার Dakshin Dinajpur district পাঁচটি জনগণনা নগর হলো  পার পতিরাম (বালুরঘাট) , গোপালপুর (গঙ্গারামপুর) , হরিরামপুর (হরিরামপুর) , চকভৃগু (বালুরঘাট) ,  ডাকরা (বালুরঘাট)

 Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা

আয়ের প্রধান উৎস হল  কৃষিকাজ। ইক্ষু, পাট, তৈলবীজ ইত্যাদি বেশি উৎপন্ন হয় এই জেলায় । বালুরঘাট শিল্পাঞ্চল ছাড়া অন্যকোনো বড়ো বা মাঝারি শিল্পাঞ্চল প্রায় নেই ফলে জেলাটি শিল্পোন্নত ও নয় ৷ কৃষিজ পাট ও তৈলবীজকে কেন্দ্র করে সদরগুলিতে ছোটো ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠলেও তা পর্যাপ্ত নয় ৷ স্থলবন্দর হিলি ও ঐতিহাসিক স্থানের কারণে জেলাটিতে বহু পর্যটকের আগমন হয়। জেলাটির ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে,  বিভিন্ন প্রত্নস্থল, প্রাচীনযুগে রাজাদের বিভিন্ন কীর্তির নিদর্শন পাওয়া যায় এই জেলা জুড়ে৷

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ধর্মীয় স্থল  পর্যটনশিল্পে কিছুটা  উন্নতিসাধন করেছে , যা জেলাটির অর্থনীতির অন্যতম উৎস৷২০১১ সালের জনগননা অনুসারে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জনসংখ্যা ১,৬৭৬,২৭৬ ভারতে 715টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যা অনুসারে এটির স্থান ২৯৫তম।২০০১-২০১১ তে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১১.৫২%। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার লিঙ্গানুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৫৬ জন নারী এবং সাক্ষরতার হার ২০০১ সালে ৬৩.৫৯% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১ সালে ৭২.৮২% (পুরুষ সাক্ষরতা ৭৮.৩৭% ও নারী সাক্ষরতা ৬৭.০১%) হয়েছে।

 Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতে সমগ্র রেলপথের দৈর্ঘ ৫৭ কিলোমিটার ৷এই জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য রেল স্টেশন ও জংশনগুলি হল বালুরঘাট স্টেশন , বুনিয়াদপুর স্টেশন , বালুরঘাট রেল স্টেশন , গঙ্গারামপুর স্টেশন Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার  একমাত্র জাতীয় সড়কটি হলো - ৫১২ নং জাতীয় সড়ক Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুরে যার দৈর্ঘ ৮৩ কিলোমিটার ৷ এছাড়া ১০ নং রাজ্য সড়ক ও একাধিক জেলা সড়ক ও গ্রামীণ সড়ক রয়েছে ৷ এগুলির মধ্যে অধিকাংশই নির্মীয়মান ৷অন্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সীমানা আছে এই জেলায়।

উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; মালদহ জেলার গাজোল , বামনগোলা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সাথে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অন্তরাজ্য সীমানা আছে৷ বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দর, হাকিমপুর, বিরামপুর, দিনাজপুর, বিরল উপজেলা ,  জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাট, পাঁচবিবি উপজেলা ,  নওগাঁ জেলার সাপাহার, পত্নীতলা, ধামুরহাট উপজেলার সাথে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার আন্তর্জাতিক সীমানা আছে।

Dakshin Dinajpur district দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হলো  আনন্দবাগান শিক্ষা নিকেতন , বালুরঘাট , অগ্রণী মহিলা সমিতি বিদ্যালয় , বালুরঘাট , বালুরঘাট উচ্চ বিদ্যালয় ,  আশুতোষ বালিকা বিদ্যালয় , বালুরঘাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, বয়রাপাড়া এফ.পি. উচ্চ বিদ্যালয় , অভিযাত্রী বিদ্যানিকেতন ,

বাঘাযতীন এ.এফ.পি. বিদ্যালয়, বাসুদেবপুর এফ.পি উচ্চ বিদ্যালয় , নালন্দা বিদ্যাপীঠ,বালুরঘাট , বালুরঘাট এল.এম. আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, গঙ্গারামপুর উচ্চ বিদ্যালয় , হিলি আর.এন. উচ্চ বিদ্যালয় , মহীপাল উচ্চ বিদ্যালয় , এছাড়াও আরও অনেক বিদ্যালয় আছে এই জেলা জুড়ে।

এই জেলা জুড়ে রয়েছে অনেক কলেজ  টেকনো গ্লোবাল , বালুরঘাট , কোটিবর্ষ প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, গঙ্গারামপুর মহাবিদ্যালয় , কুশমণ্ডি মহাবিদ্যালয় , গঙ্গারামপুর বি.এড. মহাবিদ্যালয় , দক্ষিণ দিনাজপুর বি.এড. মহাবিদ্যালয় , বালুরঘাট মহিলা মহাবিদ্যালয় , কুমারগঞ্জ মহাবিদ্যালয় , হিলি বহুশিল্পপ্রযুক্তি মহাবিদ্যালয় , গঙ্গারামপুর বহুশিল্পপ্রযুক্তি মহাবিদ্যালয় , টেকনো গ্লোবাল , বালুরঘাট ছাড়াও বহু কলেজ রয়ে এই জেলায়।

খাঁ বা খান এই লোক সংস্কৃতিটি এই জেলার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত ৷ তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতির সম্প্রদায়ের লোকের মাধ্যমে মূলত এই ধারাটি রক্ষিত ৷ গানেরকথা ও বার্তালাপগুলি হয় স্থানীয় উপভাষা অনুযায়ী ৷ মানহানিকর বা অবৈধ কোনো স্থানীয় ঘটনাকে উপস্থাপন করা ও সচেতনতা বৃদ্ধিই 'খান' এর উদ্দেশ্য ৷ এই সম্প্রদায়ের লোক বংশিহারী ও কুশমণ্ডি অঞ্চলে বেশি দেখা যায় ৷ দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি ব্লকের কিছু গ্রামেই নাটুয়া নাচ করার রীতি আছে ৷

এই জেলা জুড়ে রয়েছে অনেক পর্যটন স্থল।বুনিয়াদপুর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বড় গ্রামে অবস্থিত  বড়গ্রাম রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ,এই ধ্বংসাবশেষের আয়তন প্রায় পাঁচ বিঘার মতো।এছাড়াও এই জেলার পর্যটন স্থলগুলি হল  দুমদুমা দুর্গ , বাণগড় প্রত্নস্থল , বালুরঘাট জেলা গ্রন্থাগার , বালুরঘাট মিউজিয়াম, বাইরহট্ট প্রত্নস্থল, রামসাগর হরিণ অভয়ারণ্য ,

কীচক কুণ্ড , আরণ্যক, বালুরঘাট , সারঙবাড়ি জঙ্গল , সরনবাড়ি উদ্যাণ, হিলি , বোল্লা কালীমন্দির , মা বিদ্যেশ্বরী মন্দির, পাতিরাম , ডালদিঘি , গঙ্গারামপুর , আলতাদিঘি , বংশিহারী , গৌরদিঘি , বংশিহারী , কালাদিঘি , গঙ্গারামপুর , মালিয়ানদিঘি , বংশিহারী , তপনদিঘি , তপন, প্রাণসাগর , গঙ্গারামপুর। এই জেলার কিছু বাখ্যাত অনুষ্ঠান ও মেলা হল বালুরঘাট চামুন্ডা মেলা , পীরের মেলা , চরক মেলা , বারুনী স্নান , বোল্লা মেলা , বোলবোম , বিদ্যেশ্বরী মাতার বাৎসরিক যজ্ঞানুষ্ঠান।