শিলিগুড়ি | Siliguri

শিলিগুড়ি | Siliguri

শিলিগুড়ি Siliguri  পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি প্রধান শহর এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। একটি মূল বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে এই শহরটি বিমান, সড়ক ও রেল পথের একটি উন্নত পরিবহন জালবিন্যাস দ্বারা সু-সজ্জিত। যদি পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং এবং সিকিমের গ্যাংটক-এর মত শহরগুলিতে ভ্রমণ করতে হয় তাহলে এটি হল প্রতিটি স্থানের প্রবেশদ্বার।

শিলিগুড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র তথা ভারতের উত্তর-পূর্বের প্রবেশদ্বার। একটি বিস্তৃত সড়ক জালবিন্যাস শিলিগুড়িকে কলকাতার সাথে সংযুক্ত করে,যা দেশের বাকি অংশের সাথেও সংযোগস্থাপনের একটি প্রধান বিন্দু। শিলিগুড়ি, সড়ক দ্বারা ভারতীয় রাজ্য গ্যাংটক ও নেপাল ও ভুটান দেশের সাথে সংযুক্ত। জাতীয় মহাসড়ক ৩১,৩১-এ, ৩১-ডি এবং ৫৫ শিলিগুড়িকে প্রতিবেশী শহর এবং রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে। শিলিগুড়ির খ্যাতি প্রধানত চা, কাষ্ঠ ও পর্যটন শিল্পের জন্য।

পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি কলকাতা ও আসানসোলের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম মহানগর অঞ্চল। শিলিগুড়ি তার যমজ শহর জলপাইগুড়ি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দুই শহরের সংযুক্তির ফলে তা উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম মহানগর অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। শিলিগুড়ি এই মহকুমার একমাত্র মহানগর। মহকুমার গ্রামীণ এলাকা ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিভক্ত।

এই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া ও খড়িবাড়ি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত। শিলিগুড়ি শহরের ইতিহাস নিয়ে অনেক পর্যবেক্ষণ করে কিছু ভালো তথ্য পেলাম যা আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের জানা অবশ্যই দরকার।লেখক শৈলেন দেবনাথ খুব ভালো বর্ণনা দিয়েছেন " শিলিগুড়ি শব্দের "অর্থ হলো পাথর এবং নুড়ি এর স্তূপাকার কুন্ড। শিলিগুড়ি যে আধুনিক নামটা আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ রা রাত দিন শুনি আসলে এই নামটার উত্‍পত্তি হয়েছে শিলচাগুড়ি নামটির থেকে।

বর্তমান সময়ে এই শহর কে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটা উন্নত এবং বর্ধনশীল শহর হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। কিন্তু উন্নতির আগে এই অঞ্চলের বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে অর্থাত্‍ শহরায়ণের আগে এই অঞ্চলের বেশির ভাগ অঞ্চল ছিল দৌলকা বন এবং জঙ্গলে ভর্তি। যেহেতু শিলিগুড়ির জমি বেশ উর্বর এবং চাষযোগ্য ছিল তাই সিকিমের রাজা শিলিগুড়ি কে দখল নিয়ে দক্ষিণ প্রান্তের সিকিম এর আয়তন বৃদ্ধি করেছিলেন, যতদিন পর্যন্ত না নেপালের রাজা এটার বিরোধিতা করেছিলেন।এর পরে সুযোগ সুবিধার জন্য নেপালের কিরাটি প্রজাতি এবং নেপালি রা অনেক বেশি পরিমানে শিলিগুড়ি অঞ্চলে থাকতে শুরু করেন ক্রমশই সিকিমের রাজ পরিবারের প্রভাব শিলিগুড়ি এর বর্ধিঞ্চু এলাকাতে কমে আসে।

শিলিগুড়ি কে চোগিয়াল, নামগ্যাল বংশ শাসন করেছিল। এই শিলিগুড়ি অঞ্চল টা এর এক অদ্ভুত ভৌগোলিক স্বাচ্ছন্দ্য আছে। যেমন মহানন্দা নদীর পোর্ট অঞ্চল এর মাধ্যমে দক্ষিণ শিলিগুড়ির ফ্যান্সিদেওয়া হয়ে মালদা জেলা , পুরো পশ্চিম বাংলা , এবং বিহার রাজ্য এর ব্যবসায়িক রুট আছে যা খুব গুরুত্তপূর্ণ। ১ ৮৮১ সালে শিলিগুড়ি শহরের সাথে রেল যোগাযোগ শুরু হয়ে যাই এবং সাথে সাথে কালের নিয়মে তা অনেক উন্নতি লাভ করে যার ফলে শহরের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। জনসংখ্যার নিরিক্ষে ২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিসেব অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে শিলিগুড়ির জনসংখ্যা কলকাতা , আসানসোল এবং তার পরেই তৃতীয় স্থানে এ আছে।

শিলিগুড়ি শহর এক গুরুত্তপূর্ণ জায়গায় অবস্থান করবার জন্য এটাকে আন্তর্জাতিক করিডোর বা পরিবহন এর হাব ও বলা হয়ে থাকে। শিলিগুড়ি শহর দিয়ে চারটে দেশের আন্তর্জাতিক বর্ডার এ পৌঁছানো যাই চীন, বাংলাদেশ , নেপাল ও ভুটান। তাই প্রতি দশকে যদি লক্ষ্য করা যাই তাহলে দেখা যাবে এক সুষ্ঠূ নিয়মে শিলিগুড়ির জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে হয়তো ২০৪০ সালের মধ্যে যদি শিল্প এবং সরকারের পর্যটন শিল্পের উন্নতি করা যাই তাহলে কলকাতার পরে সব থেকে গুরুত্তপূর্ণ শহর হয়ে যেতে পারে শিলিগুড়ি যেহেতু দার্জিলিং কে শিলিগুড়ি কানেক্ট করে।

১৯৯৪ সালে ভারত এবং চীনের সাথে একটা নাথুলা পাস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং তার পরেই শিলিগুড়ির গুরুত্ব এতো টায় বৃদ্ধি পাই যে এখন একটি আন্তর্জাতিক পরিবহণ হাব বলা চলে। পুরো পূর্ব ভারতের মধ্যে এক রেকর্ড সৃষ্টিকারী শহর বলা চলে শিলিগুড়ি কে ৫৭% গ্রোথ রেট ছিল ১৯৭১-১৯৮১ এই সময় কালে। ১৯৮১-১৯৯১ সালে পুরো শিলিগুড়ি শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৪৬.৮৩% যা এক বিস্ময়কর বেপার বলা যেতে পারে।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে পুরো পূর্ব ভারতের গুয়াহাটির মতো একটা গুরুত্ত পূর্ণ বড়ো শহরের উন্নতি হচ্ছে এবং গুয়াহাটির পরেই শিলিগুড়ি শহরের স্থান গ্রোথ রেট এর নিরিক্ষে। ১৯৯৪ সালে শিলিগুড়িতে মিউনিসিপাল কর্পোরেশন তৈরী করে ফেলা হয় শহর টা কে সুন্দর করে উন্নতি করবার জন্য এবং ব্যবস্থাপনা করবার জন্য।  ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে শিলিগুড়ি শহরের জনসংখ্যা ছিল ৪,৭০,২৭৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৩% এবং নারী ৪৭%।

২০১১ সালের আদম শুমারি অনুসারে শহর সমাগমের জনসংখ্যা হল ৭,০১,৪৮৯ জন। এখানে সাক্ষরতার হার ৭০%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৫% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৬৫%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তুলনামূলকভাবে শিলিগুড়ি এর সাক্ষরতার হার ভালো। এই শহরের জনসংখ্যার ১০% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।

২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গের সংসদীয় ও বিধানসভা কেন্দ্রগুলির সীমানা পুনর্বিন্যাসের সময় ভারতের সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, শিলিগুড়ি পৌরসংস্থার ১ থেকে ৩০ নং এবং ৪৫ থেকে ৪৭ নং ওয়ার্ডগুলি নিয়ে শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্র গঠিত হয়। উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি পৌরসংস্থার অন্যান্য ওয়ার্ডগুলি জলপাইগুড়ি সদর মহকুমার অন্তর্ভুক্ত।

ফাঁসিদেওয়া ও খড়িবাড়ি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক নিয়ে গঠিত হয় ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্র। মাটিগাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সিতং বনাঞ্চল, সেবক পার্বত্য বনাঞ্চল ও সেবক বনাঞ্চলের তিনটি গ্রাম কার্শিয়াং বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। মাটিগাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অবশিষ্ট অঞ্চল ও নকশালবাড়ি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক নিয়ে গঠিত হয় মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি তফসিলি জাতি প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। শিলিগুড়ি মহকুমার এই চারটি বিধানসভা কেন্দ্রই দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।

 

সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক মাটিগাড়া  সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকটি ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা (মাটিগাড়া-১, মাটিগাড়া-২, আঠারখাই, পাথরঘাটা ও চম্পাসারি) ও একটি জনগণনা নগর (বৈরাটিশাল) নিয়ে গঠিত। এই ব্লকে দু'টি থানা রয়েছে: শিলিগুড়ি ও মাটিগাড়া। ব্লকের সদর দফতর কদমতলায় অবস্থিত।

নকশালবাড়ি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক  নকশালবাড়ি ব্লকটি ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা (নকশালবাড়ি, নিম্ন বাগডোগরা, উচ্চ বাগডোগরা, গোঁসাইপুর, হাতিঘিসা ও মণিরাম) নিয়ে গঠিত। এই ব্লকে দু'টি থানা রয়েছে: বাগডোগরা ও নকশালবাড়ি। ব্লকের সদর দফতর নকশালবাড়িতে অবস্থিত।

ফাঁসিদেওয়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক  ফাঁসিদেওয়া ব্লকটি ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা (ফাঁসিদেওয়া-বাঁশগাঁও, চটহাট-বাঁশগাঁও, বিধাননগর-১, বিধাননগর-২, ঘোষপুকুর, জলস-নিজামতাড়া ও হেটমুড়ি-সিঙ্ঘীজোড়া) নিয়ে গঠিত। এই ব্লকে একটিমাত্র থানা রয়েছে: ফাঁসিদেওয়া ব্লকের সদর দফতরও ফাঁসিদেওয়ায় অবস্থিত।

খড়িবাড়ি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক খড়িবাড়ি ব্লকটি চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা (খড়িবাড়ি-পানিশালি), রানিগঞ্জ-পানিশালি, বিন্নাবাড়ি ও বুড়াগঞ্জ) নিয়ে গঠিত। ব্লকে একটিমাত্র থানা রয়েছে: খড়িবাড়ি। ব্লকের সদর দফতরও খড়িবাড়িতে অবস্থিত।

দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা

  • দার্জিলিং পর্যন্ত চলাচলকারী টয় ট্রেন
  • পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য
  • মিরিক
  • কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম
  • হংকং বাজার
  • জলদাপাড়া
  • গরুমারা
  • কোচবিহার
  • কালিঝোড়া
  • মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি
  • মহানন্দা নদীবক্ষস্হ সুকনা।

শিলিগুড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র তথা ভারতের উত্তর-পূর্বের প্রবেশদ্বার। একটি বিস্তৃত সড়ক জালবিন্যাস শিলিগুড়িকে কলকাতার সাথে সংযুক্ত করে,যা দেশের বাকি অংশের সাথেও সংযোগস্থাপনের একটি প্রধান বিন্দু। শিলিগুড়ি, সড়ক দ্বারা ভারতীয় রাজ্য গ্যাংটক ও নেপাল ও ভুটান দেশের সাথে সংযুক্ত। জাতীয় মহাসড়ক ৩১,৩১-এ, ৩১-ডি এবং ৫৫ শিলিগুড়িকে প্রতিবেশী শহর এবং রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

তেনজিং নোরগে সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস বেসরকারি এবং সরকারি মালিকানাধীন বাসের একটি প্রধান কেন্দ্রস্থল। এছাড়াও ভুটানের রাজকীয় সরকার শিলিগুড়ি থেকে তার সীমান্ত শহর ফুন্টসোলিং পর্যন্ত বাস পরিষেবা প্রদান করে। ভাড়ার জিপ গাড়িগুলিও এই শহরকে তার প্রতিবেশী শৈল শহর দার্জিলিং, কালিম্পং, গ্যাংটক, কার্শিয়াং ইত্যাদির সাথে সংযুক্ত করে। সিকিম সরকারের সিকিম রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন, বাস স্টেশন থেকে সিকিমের বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে বাস পরিচালনা করে।

শিলিগুড়িতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন আছে; শিলিগুড়ি টাউন, শিলিগুড়ি জংশন এবং নিউ জলপাইগুড়ি জংশন। নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন বর্তমানে এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। এটি দেশের প্রতিটি প্রধান রেলপথের সাথে সংযুক্ত। বাগডোগরায় একটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর আছে যা শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৭ কিমি দূরে অবস্থিত।

বাগডোগরা বিমানবন্দর দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই ও গুয়াহাটির সাথে নিয়মিত বিমান দ্বারা সংযুক্ত। বিমানবন্দরটির দ্বারা ভুটানের থিম্পু শহর ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যাংকক শহরেরও সংযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেশ কিছু বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা এই বিমানবন্দরে পরিষেবা প্রদান করে। এই অঞ্চলে একটি বিমানঘাঁটি রয়েছে, যেখান থেকে গ্যাংটক, সিকিমের নিয়মিত হেলিকপ্টার পরিষেবা পাওয়া যায়।

 

শিলিগুড়ি পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন শহরের দূরত্বঃ

  • দিল্লী থেকে – ১৪৮৪ কিমি;
  • মুম্বাই থেকে – ২২৭১ কিমি;
  • গুয়াহাটি থেকে – ৪৭৫ কিমি;
  • কলকাতা থেকে – ৬০৬ কিমি।