উত্তর দিনাজপুর| Uttar Dinajpur

উত্তর দিনাজপুর| Uttar Dinajpur

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্যতম জেলা হল উত্তর দিনাজপুর Uttar Dinajpur। এই জেলার জেলাসদর হল রায়গঞ্জ।দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তার নামানুসারেই রাজবাড়ীতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় দিনাজপুর, যা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত।পরবর্তীতে ব্রিটিশরা রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে দিনাজপুর।দেশভাগের পর দিনাজপুর জেলার পশ্চিমাংশ পশ্চিম দিনাজপুর নামে পশ্চিবঙ্গে যুক্ত হলে পরে তার উত্তরাংশ এবং বিহারের কিশানগঞ্জের ইসলামপুর অঞ্চলকে এক করে উত্তর দিনাজপুর জেলার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ধর্মীয়, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, পৌরাণিক, প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ উত্তর দিনাজপুর জেলাটি সেন, পাল, মৌর্য ও ইসলামিক শাসনের ঐতিহ্য ও ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপের স্মৃতি বহন করে চলেছে।

প্রাচীনকালে অবিভক্ত দিনাজপুর জেলা পুণ্ড্র সাম্রাজ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। জনমতানুসারে উচ্চবর্ণ পুণ্ড্ররা প্রাচীন ঐতরেয় ব্রাহ্মণদের উত্তরসূরী। পুণ্ড্রদের অস্তিত্ব হরিবংশম ও মহাভারতেরবপ্রাথমিক পর্যায়গুলোতে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের মতে পুণ্ড্রবর্ধন সাম্রাজ্যের রাজধানী মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ বর্তমান বগুড়া জেলার করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে পাওয়া যায়। সাম্রাজ্যের অন্য নগরগুলি হল পুণ্ড্রনগর ও কোটিবর্ষ।

১২০৪ খ্রীষ্টাব্দে তুর্কী সেনানায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজী নবদ্বীপ আক্রমণ করলে গৌড়রাজ লক্ষ্মণসেন মাত্র ১৮ জন সৈনিকের ভয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরে খিলজী দেবকোটে রাজধানী স্থাপন করেন ও বরেন্দ্র ভূমি অঞ্চলে প্রভুত্ব বিস্তার করেন। পরে ১২০৬ সনে সহস্র সৈন্য নিয়ে তিব্বতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।এরপর আলি মর্দন খিলজী ও মুহাম্মাদ সিরান খিলজী লক্ষণাবতীর সিংহাসনে বসেন। দিনাজপুরের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে আলি মর্দন দেওয়ান নিয়োগ হলে ১২১০ সনে হামিম উদ্দিন ইওয়াজ তাকে হত্যা করে পরবর্তী ১৪ বছরের শাসনভার গ্রহণ করেন। তার শাসনকালে রাজধানী আবার দেবকোট থেকে গৌড়-লক্ষ্মণাবতীতে স্থানান্তরিত করা হয়।

১২২৭ সনে দিল্লীর সুলতান ইলতুত্‍মিশের জ্যেষ্ঠ পুত্র নসির উদ্দিন হাসিম উদ্দিন ইওয়াজকে পরাজিত করেন ও ১২৮৭ অবধি পরবর্তী ৬০ বছর শাসন করেন। গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র বুগরা খানের নেতৃত্বে গৌড় অঞ্চল দিল্লীর শাসনবহির্ভূত একটি পৃথক রাজ্যে রূপান্তরিত হয়। ১৩২৮ সনে মুহাম্মদ বিন তুগলক বাংলায় শাসন কায়েম করলে শাসনের সুবিধার্থে তিনটি খণ্ড তথা লক্ষ্মণাবতী, সাতগাঁও ও সোনারগাঁও অঞ্চলে বিভক্ত করেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের পর গাজী ইলিয়াস শাহ ১৪৮৭ সন অবধি শাসন করেন। মুঘল শাসন চালু হওয়ার পর দিনাজপুরে জমিদার প্রথা প্রচলন হলেও এই দুশত বছরে বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি এসময় পশ্চিম দিনাজপুর তাজপুর ও পানজারা সরকার ও ইসলামপুর অঞ্চল পূর্ণিয়া পরগণার অংশ ছিল।

১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দে যখন বাংলার দেওয়ানী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন থেকে দিনাজপুর ব্রিটিশ শাসনের আওতাভুক্ত হয়। ব্রিটিশ শাসনের প্রথম দিকে মালদহের বামনগোলার মদনাবতীতে প্রথম নীল কারখানা স্থাপিত হয়। ১৮৫৭ সনের সিপাহী বিদ্রোহ বা নবজাগরণের সময় এই জেলা নিজ স্থান অক্ষুণ্ণ রাখে। ১৯১৯ সনে জাতীয় কংগ্রেসের সহযোগীতায় সমান্তরাল প্রশাসন তৈরী করা হয় ও ১৯২৪ সনে শ্রী পুর্ণচণ্দ্র দাস গ্রেপ্তার হন। স্বরাজ্য দল বালুরঘাট ও দিনাজপুরের আসন দখল করতে সক্ষম হয় ও ১৯২৮ এ সাইমনে কমিশনের বিরূদ্ধে সমগ্র জেলাজুড়ে বন্ধ ঘোষিত হয়।

১৯৪২ এ পুর্ণচন্দ্র দাসের গ্রেপ্তার সহ তেভাগা ও অসহযোগ আন্দোলনে রায়গঞ্জ, ইটাহার অগ্নিরূপ ধারণ করে। অতঃপর জেলাভাগ ও চরম বিশৃঙ্খলার সহিত ভারত স্বাধীন রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে পশ্চিম দিনাজপুরের আত্মপ্রকাশ ঘটে।১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের সঙ্গে বিহারের বাঙালী-সুরজাপুরী অঞ্চল ইসলামপুর মহকুমা যুক্ত করা হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে জেলাটির উত্তর অংশ পৃথক হয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

২০১১ সালের জনগননা অনুসারে উত্তর দিনাজপুর জেলার জনসংখ্যা ৩০০৭১৩৪ , ভারতে ৬৪০টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যা অনুসারে এটির স্থান ১২২তম। জেলার জনঘনত্ব ৭৫৫ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার । ২০০১-২০১১ তে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২৩.১৫%। উত্তর দিনাজপুর জেলার লিঙ্গানুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৩৯ জন নারী এবং সাক্ষরতার হার ২০০১ সালে ৪৭.৮৯% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১ সালে ৫৯.০৭% । উত্তর দিনাজপুর জেলাটি ধানচাষের জন্য স্বনামধন্য এখানকার কিছু বিখ্যাত চালের প্রকারগুলি হলো তুলাইপঞ্জি, ঝিঙাশাল, পারিজাত ইত্যাদি।

বিগত কিছু বছর ধরে সরকারী উদ্যোগে রায়গঞ্জ, হেমতাবাদ, করণদিঘি, কালিয়াগঞ্জে ভুট্টাচাষ বেশ বিখ্যাত।ভুট্টাকে কেন্দ্র করে জেলাটিতে ছোটো ছোটো কিছু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা পাটচাষের জমি রয়েছে যা কৃষিজ সর্বাধিক আয় বহন করে। প্রতিটি ব্লকেই উন্নতমানের পাটচাষ হয়। পাটকে কেন্দ্র করে কিছু কুটিরশিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এই জেলার উত্তরভাগে আনারসের চাষ হয়। এছাড়াও প্লাস্টিক শিল্প, গুঁড়ো মশলা প্রস্তুতি এবং ইসলামপুর ও চোপড়াতে চা-এর বাজার উল্লেখযোগ্য।

রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর এই দুটি মহকুমা নিয়ে এই জেলা গঠিত। ইসলামপুর মহকুমায় ৫ টি থানা, ৫ টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ৫ টি পঞ্চায়েত সমিতি, ৫৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৭৫৭ টি মৌজা, ৩০ জনবসতিপূর্ণ গ্রাম, ২ টি পৌরসভা এবং ২ টি আদমশুমারি শহর রয়েছে । ইসলামপুর ও ডালখোলায় পৌরসভা রয়েছে। আদমশুমারির শহরগুলি হল: চোপড়া এবং হানসকুন্ডা । ইসলামপুর মহকুমার সদর দফতর ইসলামপুরে অবস্থিত।ইসলামপুর মহকুমা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক গুলি হল ইসলামপুর , করণদিঘি , গোয়ালপোখর-১, গোয়ালপোখর-২ , চোপড়া ।

ইসলামপুর ব্লক ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল অগদিম্তি - খানতি, গুঞ্জারিয়া, মটিকুণ্ড ১, মটিকুণ্ড ২, রামগঞ্জ ১ রামগঞ্জ ২, গাইশাল ১, গাইশাল ২, ইসলামপুর, পণ্ডিতপোতা ১,পণ্ডিতপোতা ২, কমলগাঁও - সুজালী, গোবিন্দপুর।

চোপড়া ব্লক  আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল হাপতিয়াগছ, মাঝিয়ালী,চোপড়া,ঘিড়নিগাঁও, লক্ষ্মীপুর দাসপাড়া, চুটিয়াখোর, এবং সোনাপুর

গোয়ালপোখর ১ ব্লক ১৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল ধরমপুর ২, গোয়ালপোখর, লোধন, সাহাপুর জৈনগাঁও, মহুয়া, সাহাপুর ২, গোয়াগছ ১, ধরমপুর ১, গোটি, পাঞ্জিপাড়া, গোয়াগছ ২, খাগড় এবং পোখরিয়া।

গোয়ালপোখর ২ ব্লক ১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল সাহাপুর ১, সাহাপুর ২, সুরজাপুর ১, সুরজাপুর ২, নিজামপুর ১,নিজামপুর ২, বেলন, বিদ্যানন্দপুর, কানকি, তোরিয়াল এবং চাকুলিয়া।

করণদিঘি ব্লক ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল আলতাপুর ১,লাহুতারা ১, লাহুতারা ২, দোমোহনা, বাজারগাঁও ২, করণদিঘি ১, করণদিঘি ২, বাজারগাঁও ১, রাণীগঞ্জ, রসখোয়া ১, রসখোয়া ২। আলতাপুর ২, ডালখোলা ১। ইসলামপুর মহকুমার থানাগুলি হল ইসলামপুর , গোয়ালপোখর , চাকুলিয়া , ডালখোলা , চোপড়া , করণদিঘি।

রায়গঞ্জ মহকুমায় রায়গঞ্জ , হেমতাবাদ , কালিয়াগঞ্জ , ইটাহার এই ৪ টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ও রায়গঞ্জ পৌরসভা ও কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা এই ২ টি পৌরসভা রয়েছে।

হেমতাবাদ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত সেগুলি হল বাঙালবাড়ি, চৈনগর, নওদা, বিষ্ণুপুর, হেমতাবাদ। সদরটি হেমতাবাদ-এ অবস্থিত।

ইটাহার Itahar সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ১২ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত , সেগুলি হল ছয়ঘড়া, গুলন্দর ১ ও ২, জয়হাট, পাতিরাজপুর, দুর্গাপুর, কাপাশিয়া, সুরুন ১ ও ২, দুর্লভপুর, ইটাহার, মারনাই। সদরটি ইটাহার-এ অবস্থিত।

কালিয়াগঞ্জ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত , সেগুলি হল অনন্তপুর, ভাণ্ডার, ধানকৈল, মুস্তাফানগর, বরুণা, বোচাডাঙ্গা, মালগাঁও, রাধিকাপুর। সদরটি কালিয়াগঞ্জ-এ অবস্থিত।

রায়গঞ্জ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ১৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত , সেগুলি হল - বাহিন, গৌরী, মাহিপুর, শীতগ্রাম, বরুয়া, ভিন্দোলে, জগদীশপুর, মারাইকুড়া, ভাতুন, কমলাবাড়ি ১ ও ২, শেরপুর, রামপুর মহারাজাহাট, বীরঘই। সদরটি রায়গঞ্জ-এ অবস্থিত।উত্তর দিনাজপুর লোকসভা কেন্দ্রটি হল রায়গঞ্জ , আর বিধানসভা কেন্দ্রগুলি হল গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, করণদিঘি, হেমতাবাদ, চোপড়া, ইসলামপুর, কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ, ইটাহার।

ভৌগলিক দিক থেকে এই জেলার উত্তরে রয়েছে দার্জিলিং জেলা ও মহানন্দা নদী বয়ে গেছে , দক্ষিণে রয়েছে মালদহ জেলা , পূর্বদিকে রয়েছে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমদিকে রয়েছে বিহার , এই জেলাতে প্রবাহিত নদিগুলি উত্তর থেকে দক্ষিণ বা দক্ষিণ পূর্বে প্রবাহিত। এই জেলার উল্লেখযোগ্য নদী গুলি হল টাঙ্গন , নাগর , ডাহুক , মহানন্দা প্রভৃতি। এছাড়াআরও অনেক নদনদী এই জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আগত কুলিক নদী রায়গঞ্জ জেলার মধ্যে দিয়ে উত্তর দিনাজপুরে প্রবেশ করেছে।

উত্তর দিনাজপুর জেলার মাত্র ১০ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফল বনভূমি আচ্ছাদিত। কুলিক পাখিরালয় এই জেলার একটি অন্যতম আকর্ষণ।এই জেলাটির রেলপথকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা দক্ষিণাংশে পুর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত বারসোই-রাধিকাপুর রেলশাখার ৪১ কিলোমিটার এবং উত্তরাংশে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত বারসোই-নিউ জলপাইগুড়ি রেলশাখার ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ, যা জেলাটির অন্তর্ভুক্ত। কিছু উল্লেখযোগ্য রেলস্টেশন ও জংশনগুলি হলো রাধিকাপুর প্রান্তিক স্টেশন , রায়গঞ্জ স্টেশন, ডালখোলা স্টেশন, আলুবাড়ি রোড জংশন ।

এছাড়াও দুটি প্রস্তাবিত রেলসংযোগ হলো রায়গঞ্জ-ইটাহার-গাজোল, রায়গঞ্জ-ডালখোলা। উত্তর দিনাজপুর জেলাতে অবস্থিত জাতীয় সড়ক গুলি হলো - ৩৪ নং, ১২ নং, ২৭ নং। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর, কুশমণ্ডি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক , মালদহ জেলার গাজোল, চাঁচল-১, চাঁচল-২, রতুয়া-২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক , দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সাথে উত্তর দিনাজপুর জেলার অন্তর্রাজ্য সীমান্ত সীমানা বন্টিত। বিহার রাজ্যের কিশানগঞ্জ জেলার পোথিয়া,

 

কিশানগঞ্জ তহশিল , বইনসি তহশিল , পূর্ণিয়া জেলার আমাউর, কাটিহার জেলার বলরামপুর, বারসোই তহশিলের সাথে উত্তর দিনাজপুর জেলার আন্তঃরাজ্য সীমান্ত সীমানা আছে ।বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বিরল, বোচাগঞ্জ উপজেলা,ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর উপজেলা, পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড়, তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী উপজেলার সাথে উত্তর দিনাজপুর জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত আছে।

 

শিক্ষা

শিক্ষার দিক থেকেও এই জেলা বেশ উন্নত। এই জেলায় বহু সরকারি , বেসরকারি , প্রাথমিক , উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।শিবরাম উচ্চ বিদ্যালয় , ইটাহার উচ্চ বিদ্যালয় ,দিগনা উচ্চ বিদ্যালয় ,কাপাশিয়া এ.এম উচ্চ বিদ্যালয়, দুর্গাপুর সাধারণ বিদ্যালয়, হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রায়গঞ্জ সেন্ট জেভিয়ার্স উচ্চ বিদ্যালয় , রায়গঞ্জ শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবন , রায়গঞ্জ মোহনবাটি উচ্চ বিদ্যালয় ,উত্তর দিনাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ,কুনোর কে.সি.হাই স্কুল , ডালখোলা উচ্চ বিদ্যালয় , দাঁড়িভীট উচ্চ বিদ্যালয় ,টাটু সিংহ স্মৃতি বিদ্যালয়, বেগুয়া উচ্চ বিদ্যালয় , দমদমা উচ্চ বিদ্যালয় ,কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, রায়গঞ্জ , চোপড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় , ইটাহার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় , করণদিঘি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় , সেন্ট মেরি উচ্চ বিদ্যালয়, ডালখোলা ,ভুপাল চন্দ্র বিদ্যাপীঠ, রাজবাড়ীগেট।

এছাড়াও আরও অনেক বিদ্যালয় রয়েছে এই জেলা জুড়ে। কালিয়াগঞ্জ মহাবিদ্যালয় , রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয় , চোপড়া কমলা পাল স্মৃতি মহাবিদ্যালয় , ডঃ মেঘনাথ সাহা মহাবিদ্যালয় , ইসলামপুর মহাবিদ্যালয় , কালিয়াগঞ্জ মহাবিদ্যালয়, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্র, ইটাহার , নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্র, রায়গঞ্জ , রবীন্দ্র নজরুল স্মৃতি শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্র মহাবিদ্যালয় , পশ্চিমবঙ্গ পশু ও মত্‍স্যবিদ্যা মহাবিদ্যালয় , উত্তরবঙ্গ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র , আই.টি.আই রায়গঞ্জ , আই.টি.আই কালিয়াগঞ্জ , রিনপোচে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয় , ইসলামপুর সরকারী বহুশিল্পপ্রযুক্তি মহাবিদ্যালয় , রায়গঞ্জ বহুশিল্পপ্রযুক্তি মহাবিদ্যালয় সহ আরও অনেক মহাবিদ্যালয় রয়েছে এই জেলা জুড়ে। জেলার সদর রায়গঞ্জে রয়েছে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ, এছাড়াও এই জেলায় রয়েছে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়।

নানান ঐতিহাসিক আন্দোলনের সাক্ষী এই জেলা। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই জেলার নাম। ১৯৩৯ সালে আধিয়ার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এই জেলা। উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রখ্যাত আইনজীবী নিশীথ নাথ কুন্ডু গান্ধীজির ডাকে সাড়া দিয়ে আদালত বর্জন করে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন দেশের স্বার্থে , স্বাধীনতা সংগ্রামী শিবচরণ সরকার , স্বাধীনতা সংগ্রামী বিশ্বনাথ চক্রবর্তী এই জেলার মানুষ।এছাড়াও এই জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন গোপাল চন্দ্র মন্ডল , চন্দ্র মোহন বন্দোপাধ্যায় , কল্যাণ কুমার গোস্বামী , শরত্‍ চন্দ্র মজুমদার , রবীন মজুমদার , সঙ্গীতজ্ঞ কৈলাস চন্দ্র দাস , মহারাজ জগদীশ নাথ রায় , প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সিদ্ধার্থ শংকর রায় , দীপা দাশমুন্সি , অমল আচার্য্য প্রমুখ ব্যক্তিত্ব।

উত্তর দিনাজপুর জেলায় রয়েছে অনেক পর্যটন স্থল ও দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান হল কুলিক পাখিরালয়ইয়(রায়গঞ্জ), উত্তর দিনাজপুর জেলা সংগ্রহশালা , সাপনিকলা বনাঞ্চল ( চোপড়া) , বয়রা কালী মন্দির (কালিয়াগঞ্জ),নাট মন্দির (কালিয়াগঞ্জ), বিজোলিয়া প্রকৃতিবান্ধব পর্যটন , বিন্দোল ভৈরবী মন্দির , বয়রা কালী মন্দির ( কালিয়াগঞ্জ), রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য , মহারাজাহাট , নাট মন্দির( কালিয়াগঞ্জ ), শ্রী শ্রী বৈদ্যনাথ ধাম, শ্রী শ্রী শিব গোপাল এর জাগ্রত মন্দির , বাহিন রাজবাড়ী। জেলাটির কিছু বিখ্যাত মেলা হল পীরের উরস , শনি মন্দির মেলা প্রাঙ্গণ ( মহারাজাহাট), করণদিঘি শিরুয়া মেলা , মহারাজাহাট কিরতন মেলা , করণদিঘি শিরুয়া মেলা।

এই জেলা জুড়েই ছোটো-বড় বাঁশের কাজ দেখা যায়। কালিয়াগঞ্জের ধানকলে বাঁশের তৈরী বাঁদর-মুখোশ তৈরী করা হয় , বিন্দলের কুলো জেলার মধ্যে বিখ্যাত, রংবেরঙের পাটের ঢোকরার কাজ জগত্‍বিখ্যাত। মালগাঁওতে পাট ব্যবহার করে উত্‍কৃষ্ট ও সুদর্শন পাটি, আসন, শতরঞ্চি তৈরী করা হয়।ডালখোলা ও করণদিঘি অঞ্চলে বোঞ্জ এর পুতুল তৈরী বা পাতের ওপর কাজ করা হয়।উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার ব্লকের কিছু গ্রামেই নাটুয়া নাচ করার রীতি আছে ।দিনাজপুরী ও সুরজাপুরি উপভাষাতে রচিত জঙগানগুলি হেমতাবাদ, চোপড়া অঞ্চলের ঐতিহ্য।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পর্যটন দফতরের কাছে পাঠানো তালিকায় রয়েছে চোপড়ার হোসেন দিঘি, গান্ধার দিঘি, ইসলামপুরের কলতাহার মসজিদ এবং সোনাখোদা মসজিদ, গোয়ালপোখর ১ ব্লকের গোয়াগাঁও জমিদারবাড়ি, দেবীগঞ্জ ডাকবাংলো, গোয়ালপোখর ২ ব্লকের লালগঞ্জ কালীমন্দির এবং ভগত বাড়ি, করণদিঘির বাজারগাঁও দূর্গ, বাগিন্দার শিবমন্দির, রায়গঞ্জের বাহিন জমিদারবাড়ি, বালিয়া রাজবাড়ি, হেমতাবাদের মালন ডাকবাংলো ও হেমতাবাদ থানাঘর, কালিয়াগঞ্জের বালিয়া দুর্গা ও লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির এবং তমছাড়ি মঠবাড়ি, ইটাহারের চূড়ামণ শিবমন্দির।