শ্রী শ্রী কালী পূজা পদ্ধতি

শ্রী শ্রী কালী পূজা পদ্ধতি

কালী বা কালিকা হলেন একজন হিন্দু দেবী। তাঁর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত ধর্মাবলম্বীরা কালীর পূজা করেন। তন্ত্রশাস্ত্রের মতে, তিনি দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত তন্ত্রমতে পূজিত প্রধান দশ জন দেবীর মধ্যে প্রথম দেবী। শাক্তরা কালীকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদিকারণ মনে করে। বাঙালি হিন্দু সমাজে দেবী কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। প্রধানত বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এই উৎসব উপলক্ষ্যে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষিত হয়। বাংলায় গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীপ্রতিমার নিত্যপূজা হয়ে থাকে।

কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত সাংবাৎসরিক দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই দিন আলোকসজ্জা ও আতসবাজির উৎসবের মধ্য দিয়ে সারা রাত্রিব্যাপী কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, দীপান্বিতা কালীপূজার দিনটিতে ভারতের অন্যান্য জায়গায় দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই দিন লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হলেও বাঙালি, অসমিয়া ও ওড়িয়ারা এই দিন কালীপূজা করে থাকেন। মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে ফলহারিণী কালীপূজাও যথেষ্ট জনপ্রিয়। এছাড়াও শনি ও মঙ্গলবারে, অন্যান্য অমাবস্যায় বা বিশেষ কোনো কামনাপূরণের উদ্দেশ্যেও কালীর পূজা করা হয়।

 কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়। তাঁর পূর্বে কালী উপাসকগণ তাম্রটাটে ইষ্টদেবীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে পূজা করতেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে কালীপূজা বাংলায় দুর্গাপূজার মতোই এক বিরাট উৎসব।

আগে গণেশ পুজা  ওঁ খর্ব স্থুলতনু গজেন্দ্রবদনং লম্বধরনং সুন্দরম । প্রসন্দন মদগন্ধলুব্ধমধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম । দন্তঘাত বিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দুরশোভাকরম , বন্দে শৈলসুতাং গনপতিং সিদ্ধিপ্রদং কর্মসু ।।

পুজা মন্ত্র ; এষ গন্ধ ওঁ গণেশায় নমঃ , এতৎ সচন্দন পুষ্পম ওঁ গণেশায় নমঃ , এষ ধুপ ওঁ গণেশায় নমঃ , এষ দীপ ওঁ গণেশায় নমঃ , এতন নৈবেদ্য ওঁ গণেশায় নমঃ । জপঃ ওঁ গণেশায় নমঃ

প্রনাম মন্ত্র ঃ ওঁ দেবেন্দ্রমৌলিমন্দার মকরন্দকনারুনাঃ । বিঘ্নং হরন্তত হেরম্বুচরনাম্বুজ রেনবেঃ ।

সূর্যের ধ্যান ঃ ওঁ রক্তাম্বুজাসনমশেষগুনৈকসিন্ধুং , ভানুং সমস্তজগতামধিপং ভজামি । পদ্মদ্বয়াভয়রবান দধতং করাজৈর  মানিক্যমৌলিমরুণাঙ্গরুচিং ত্রিনেত্রম ।

পুজা মন্ত্র ঃ এষ গন্ধ  ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ , এতৎ সচন্দনপুস্পম ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ , এষ ধুপ ওঁ শ্রীসূর্যা নমঃ ,এষ দীপ ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ , এতন নৈবেদ্যম ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ । 

জপ মন্ত্র ঃ ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ

প্রনাম মন্ত্র ঃ ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম । ধবান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতহস্মি দিবাকরম ।

গণেশ পুজা  ওঁ খর্ব স্থুলতনু গজেন্দ্রবদনং লম্বধরনং সুন্দরম । প্রসন্দন মদগন্ধলুব্ধমধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম । দন্তঘাত বিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দুরশোভাকরম , বন্দে শৈলসুতাং গনপতিং সিদ্ধিপ্রদং কর্মসু ।।

পুজা মন্ত্র ; এষ গন্ধ ওঁ গণেশায় নমঃ , এতৎ সচন্দন পুষ্পম ওঁ গণেশায় নমঃ , এষ ধুপ ওঁ গণেশায় নমঃ , এষ দীপ ওঁ গণেশায় নমঃ , এতন নৈবেদ্য ওঁ গণেশায় নমঃ । জপঃ ওঁ গণেশায় নমঃ

প্রনাম মন্ত্র ঃ ওঁ দেবেন্দ্রমৌলিমন্দার মকরন্দকনারুনাঃ । বিঘ্নং হরন্তত হেরম্বুচরনাম্বুজ রেনবেঃ ।

সূর্যের ধ্যান ঃ ওঁ রক্তাম্বুজাসনমশেষগুনৈকসিন্ধুং , ভানুং সমস্তজগতামধিপং ভজামি । পদ্মদ্বয়াভয়রবান দধতং করাজৈর  মানিক্যমৌলিমরুণাঙ্গরুচিং ত্রিনেত্রম ।

পুজা মন্ত্র ঃ এষ গন্ধ  ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ , এতৎ সচন্দনপুস্পম ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ , এষ ধুপ ওঁ শ্রীসূর্যা নমঃ ,এষ দীপ ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ , এতন নৈবেদ্যম ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ । 

জপ মন্ত্র ঃ ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ

প্রনাম মন্ত্র ঃ ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম । ধবান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতহস্মি দিবাকরম ।

নারায়নের ধ্যান ঃ ওঁ ধ্যেয় সদাসাবিত্রীমণ্ডলমধ্যবর্তি নারায়ণঃ সরসিজাসন সন্নিবিসট , কেয়ুরবান কনককুণ্ডলবান কিরীটীহারি হিরন্ময়বপু ধৃত শঙ্খচক্রঃ ।

 পুজা মন্ত্র ঃ এষ গন্ধ ওঁ নমঃ নারায়নায় , এতৎ সচন্দনপুস্পম ওঁ নমঃ নারায়ণায় , এষ ধুপ ওঁ নমঃ নারায়নায় ,এষ দীপ ওঁ নমঃ নারায়নায়  , এতৎ সচন্দনতুলসিপত্রম ওঁ নমস্তে বহুরুপায় বিষ্ণুবে পরমাত্মনে স্বাহা , এতন নৈবেদ্যম ওঁ নমঃ নারায়নায় ।

 প্রনাম মন্ত্র ঃ ওঁ নমঃ ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মনহিতায় চ , জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমঃ নমঃ ।

 শিবের ধ্যান ঃ ওঁ ধ্যায়েন্নিতাং মহেশাং রজতগিরিনিভং চারু চন্দ্রাবতংসং রত্নাকল্পজ্জ্বালাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তাং প্রসন্নম । পদ্মাসীনং সমস্তাংস্ততমমর গণৈ ব্যাঘ্রকৃতিং বসানং বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিল ভয়হরং পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রম ।

পুজা মন্ত্র ঃ এষ গন্ধ ওঁ নমঃ শিবায় , এতদ সচন্দনপুস্পম ওঁ নমঃ শিবায় , এতৎ সচন্দনবিল্বপত্রম ওঁ নমঃ শিবায় । এষ ধূপ ওঁ নমঃ শিবায় ,এষ দীপ ওঁ নমঃ শিবায় ,।

মহাকালের ধ্যান - কূর্ম মুদ্রায়।  ওঁ মহাকালং যজেদ্দেব্যা দক্ষিণে ধুম্রবর্ণকম্।  বিভ্রতং দণ্ডখট্টাঙ্গৌ দংষ্ট্রাভীমমুখং শিশুম্।। ব্যাঘ্রচর্ম্মাবৃতকটিং তুন্দিলং রক্তবাসসম্। ত্রিনেত্রমূধর্বকেশঞ্চ মুণ্ডমালা বিভূষিতম্। জটাভারলসচ্চন্দ্রখণ্ড মুগ্ৰং জ্বলন্নিভম্ ।।

 ধ্যান করে পুষ্প নিজ মস্তকে ধারণ করতঃ  মানস পূজা করে আবার ধ্যান করে পুষ্পটি ঘটে দিন এবং পুনরায় – আবাহনী মুদ্রায় – ওঁ মহাকাল ভৈরব ইহা গচ্ছ, ইহাগচ্ছ। স্থাপনী মুদ্রায় – ইহতিষ্ঠ, ইহতিষ্ঠ। সন্নিধাপনী মুদ্রায় – ইহ সন্নিধেহি। সংরোধনী মুদ্রায় – ইহ সন্নিরুধ্যস্ব। সম্মুখীকরণী মুদ্রায় – অত্রাধিষ্ঠানং কুরু। করজোড়ে – মম পুজাং গৃহাণ্।

রজতাসন -  রেকাবি বা বেলপাতায় আসনটি রেখে প্রথমে ‘বং এতস্মৈ রজতাসনায় নমঃ’ মন্ত্র ৩ বার পাঠ করে প্রত্যেকবার কুশোদক দেবেন ও ‘এতে গন্ধপুষ্পে রজতাসনায় নমঃ”, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ মন্ত্র বলে আসনে গন্ধপুষ্প দেবেন ও ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলে পাত্রসহ আসনটি ডানহাতে নিয়ে ‘ওঁ সৰ্ব্ববিঘ্নান্ নাশয় নাশয় হ্রীং শ্রীং ফট্ স্বাহা। ইদং রজতাসনং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলে আসন দান করবেন। এভাবে অন্যান্য উপচার সমূহও পূজা করে নিবেদন করতে হবে।

  স্বাগতম্ -   ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরব সর্ব্ববিঘ নাশয় নাশয় হ্রীং শ্রীং ফট্ স্বাহা। মহাকাল ভৈরব স্বাগতং সুস্বাগতং ।

 পাদ্যং -   একটি বাটিতে বা কুশীতে জল নিয়ে ‘বং এতস্মৈ পাদ্য উদকায় নমঃ, ‘এতে গন্ধপুষ্পে পাদ্য উদকায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’, ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ ।

 অর্ঘ্য -   তামার জলশঙ্খে দুর্বা, আতপ চাল ও বেলপাতা রেখে অৰ্ঘ্য প্ৰস্তুত করে ‘বং এতস্মৈ অর্ঘ্যায় নমঃ’ ৩ বার বলে ৩ বার কুশার জল ছিটিয়ে ‘এতে গন্ধপুষ্পে অর্ঘ্যায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’, ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’।

 আচমনীয় -  একটি বাটিতে বা কুশীতে জল নিয়ে পূর্ব নিয়মে ‘এতস্মৈ বং আচমনীয় জলায় নমঃ’ মন্ত্র ৩ বার পাঠ করে কৃশের জল ৩ বার ছিটাবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে আচমনীয় জলায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে ওঁ বিষ্ণবে নমঃ” বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন। 

 মধুপর্ক - Cold Drink Of Honey দধি, ঘৃত, জল, শর্করা (চিনি) ও মধু একত্রে মিশালে মধুপর্ক প্রস্তুত হয়। দধি, ঘৃত ও চিনি সমান পরিমাণে মিশাতে হয়। কাঁসা ভিন্ন অন্য পাত্রে মধুপর্ক দিতে হবে। মধুপর্কের পাত্র বামহাতে ধরে ‘এতস্মৈ ওঁ বং সাধার মধুপর্কায় নমঃ’ মন্ত্রে ৩ বার কুশ দ্বারা জলের ছিটা দিবেন। আবার গন্ধপুষ্প নিয়ে ‘এতে গন্ধপুষ্পে মধুপর্কায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

 পুনরাচমনীয় -   কুশীতে জল নিয়ে ‘এতস্মৈ বং পুনরাচমনীয় জলায় নমঃ’ মন্ত্র ৩ বার পাঠ করে কুশের জল ৩ বার ছিটাবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে পুনরাচমনীয় জলায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

 স্নানীয় - Bathing Water কুশীতে গঙ্গাজল অথবা সাধারণ জল নিয়ে ‘এতস্মৈ বং স্নানীয় জলায় নমঃ’ মন্ত্র ৩ বার পাঠ করে কৃশের জল ৩ বার ছিটাবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে স্থানীয় জলায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

 বসন (বস্ত্র) - Dressings বামহাতে বস্ত্র নিয়ে ‘এতস্মৈ বং বস্ত্রায় নমঃ’ মন্ত্র ৩ বার পাঠ করে কুণ্ডের জল ৩ বার ছিটাবেন। এতে গন্ধপুষ্পে বস্ত্রায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

 যজ্ঞোপবীত -  একটি রেকাবিতে যজ্ঞোপবীত রেখে ‘এতস্মৈ বং যজ্ঞোপবীতায় নমঃ’ মন্ত্র ৩ বার পাঠ করে কুশের জল ৩ বার ছিটাবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে যজ্ঞোপবীতায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

 আভরণ - Ornaments রজতাভরণ (অঙ্গুরী) একটি পাত্রে বা বেলপাতায় নিয়ে বামহাতে স্পর্শ করে ‘এতস্মৈ বং আভরণায় নমঃ’ মন্ত্র ৩ বার পাঠ করে কৃশের জল ৩ বার ছিটাবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে আভরণায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

 গন্ধ - Scent একটি নীল অপরাজিতা পুষ্পে শ্বেতচন্দন নিয়ে ‘এতস্মৈ বং গন্ধায়ৈ নমঃ’ মন্ত্র পাঠ করে ৩ বার কুশের জল দিয়ে অভ্যুক্ষণ করবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে গন্ধায়ৈ নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

পুষ্প - Flowers একটি সচন্দন পুষ্প নিজ বামে রেকাবিতে রেখে বামহাতে ধরে ‘এতস্মৈ বং পুষ্পায় নমঃ’ মন্ত্র পাঠ করে ৩ বার কৃশের জল দিয়ে অভ্যুক্ষণ করবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে পুষ্পায়ৈ নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ” বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

বিল্বপত্র - Woodapple Leaves একটি পূর্ণাঙ্গ বিল্বপত্রে শ্বেতচন্দন মেখে নিজবামে একটি রেকাবিতে রেখে ‘এতস্মৈ বং বিল্বপত্রায় নমঃ’ মন্ত্র পাঠ করে ৩ বার অভ্যূক্ষণ করবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে বিল্বপত্রায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ ‘ বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

 ধূপ - Incense নিজবামে ধুনুচিতে ধূপ (অভাবে ধূপকাঠি) জ্বেলে ‘এতস্মৈ বং ধূপায় নমঃ’ মন্ত্র পাঠ করে ৩ বার অভ্যূক্ষণ করবেন। এতে গন্ধপুষ্পে ধূপায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

 দীপ - Light নিজবামদিকে রাখা প্রজ্জ্বল্যমান মূল প্রদীপ উদ্দেশ্য করে ‘এতস্মৈ বং দীপায় নমঃ’ বলে ৩ বার অভ্যুক্ষণ করবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে দীপায় নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলে গন্ধপুষ্প দেবেন। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলুন।

 নৈবেদ্য -   নিজের বামদিকে এবং দেবতার ডানদিকে নৈবেদ্য রেখে ‘এতস্মৈ বং নৈবেদ্যায় নমঃ’ বলে ৩ বার অভ্যুক্ষণ করবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে নৈবেদ্যায় নমঃ”, “এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ’ বলে ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবায় নমঃ’ বলে নিবেদন করুন।

 তর্পণ (তত্ত্বমুদ্রায়) - Offering Water To Deities ‘ওঁ হূং ক্ষ্রৌং যাং রাং লাং বাং আং ক্রৌং মহাকাল ভৈরবং তর্পয়ামি নমঃ’। মন্ত্রে ৩ বার তর্পণ করুণ।

 মাধ্বিক সুধা দান : একটি কাঁসার পাত্রে মধু, নারিকেল জল ও আদার রস মিশিয়ে অর্চ্চনা প্রস্তুত করুন। এবার ‘বং এতস্মৈ কাংস্যাধার মাধ্বিক সুধায়ৈ নমঃ’ বলে ৩ বার কুশের জল দিয়ে অভ্যুক্ষণ করবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ মাধ্বিক সুধায় নমঃ’ বলে পূজা করবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদ্‌ধিপতয়ে ওঁ উন্মত্ত ভৈরবায় নমঃ’। ‘এতৎ সম্প্রদানায় ক্রীং শ্ৰীমদ্দক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ’ বলে উৎসর্গ করুন এবং হূং ফট্ স্বাহা মন্ত্র বলে মায়ের ডানদিকের নীচের হাতে অর্পন করুন।

 দেবীর অস্ত্র পূজা  : এবার নিম্নলিখিত মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দ্বারা দেবীর অস্ত্রসমূহের পূজা করুন। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ বজ্ৰায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ শক্তয়ে নমঃ । এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ দণ্ডায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ খড়গায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ অঙ্কুশায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ গদায়ৈ নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ শূলায় নমঃ । এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ চক্ৰায় নমঃ । এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ বরায় নমঃ । এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ পদ্মায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ অভয়ায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ কপালায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ মুণ্ডমালায়ৈ নমঃ।

 গুরুপংক্তি পূজা : এবার নিম্নলিখিত মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দ্বারা গুরুগণের পূজা করুন এবং তত্ত্ব মুদ্রায় তর্পণ করুন। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ঐং দিবৌঘ শ্রীগুরুগণ শ্রীপাদুকাং পূজয়ামি নমঃ। ওঁ ঐং দিবৌঘ শ্রীগুরুগণ শ্রীপাদুকাং তর্পয়ামি নমঃ ॥১ । এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ঐং সিদ্ধৌঘ শ্রীগুরুগণ শ্রীপাদুকাং পূজয়ামি নমঃ। ওঁ ঐং সিদ্ধৌঘ শ্রীগুরুগণ শ্রীপাদুকাং তর্পয়ামি নমঃ ॥২॥ এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ঐং মানবৌঘ শ্রীগুরুগণ শ্রীপাদুকাং পূজয়ামি নমঃ। ওঁ ঐং মানবৌঘ শ্রীগুরুগণ শ্রীপাদুকাং তর্পয়ামি নমঃ ॥৩॥ এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ঐং পরমগুরুং শ্রীপাদুকাং পূজয়ামি নমঃ । ওঁ ঐং পরমগুরুং শ্রীপাদুকাং তর্পয়ামি নমঃ ॥৪ এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ঐং পরাপরগুরুং শ্রীপাদুকাং পূজয়ামি নমঃ । ওঁ ঐং পরাপরগুরুং শ্রীপাদুকাং তর্পয়ামি নমঃ ॥৫। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ঐং পরমেষ্ঠীগুরুং শ্রীপাদুকাং পূজয়ামি নমঃ । ওঁ ঐং পরমেষ্ঠীগুরুং শ্রীপাদুকা‍ তর্পয়ামি নমঃ।৬। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ঐং শ্রী অমুকীদেব্যম্বাসহিত (নিজ গুরুপত্নীর নাম) শ্রীমৎ অমুকানন্দ নাথ (নিজ গুরুর নাম) শ্রীগুরুং পূজয়ামি নমঃ । শ্রী অমুকীদেব্যম্বাসহিত (নিজ গুরুপত্নীর নাম) শ্রীমৎ অমুকানন্দ নাথ (নিজ গুরুর নাম) শ্রীগুরুং শ্রীপাদুকাং তর্পয়ামি নমঃ।৭।

 পুনরায় দেবীর পূজা : ‘ক্রীং’ মন্ত্রে অঙ্গন্যাস ও করন্যাস করে কুর্মমুদ্রায় দেবীর ধ্যান করতঃ পঞ্চোপচারে দেবীর পূজা করুন। যথা- একটি জবাপুষ্পে রক্তচন্দন লাগিয়ে ‘এষ গন্ধং ওঁ ক্রীং শ্রীমৎ দক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ। এবার আর একটি জবাপুষ্পে রক্তচন্দন মিশিয়ে ‘ ‘এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ক্রীং শ্রীমৎ দক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ’। ‘এষ ধূপং ওঁ ক্রীং শ্রীমৎ দক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ’। ‘এষ দীপং ওঁ ক্রীং শ্রীমৎ দক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ’। “ইদং নৈবেদ্যং ওঁ ক্রীং শ্রীমৎ দক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ’। এবার নিম্নলিখিত মন্ত্রে ৩ বার পুষ্পাঞ্জলি দিন। যথা – ‘এষ পুষ্পাঞ্জলি সায়ুধবাহন পরিবার শ্রীমন্ মহাকাল ভৈরবসহিত ক্রীং শ্রীমৎ দক্ষিণকালিকা শ্রীপাদুকাং পূজয়ামি নমঃ।’ এখন তত্ত্ব মুদ্রায় নিম্নলিখিত মন্ত্রে মায়ের তর্পণ করুন। যথা – “সায়ুধবাহন পরিবার শ্রীমন্ মহাকাল ভৈরবসহিত ক্রীং শ্রীমৎ দক্ষিণকালিকা শ্রীপাদুকাং তর্পয়ামি নমঃ। ক্রীং শ্রীমৎ দক্ষিণ কালিকা মাতস্তৃপ্যতাম্।’ এবার কৃতাঞ্জলি মুদ্রায় (করজোড়ে) মন্ত্রপাঠ করুন। যথা- ‘সায়ুধবাহন পরিবার শ্রীশ্রীমহাকাল ভৈরবসহিত ওঁ ক্রীং শ্রীমৎ দক্ষিণকালিকাঃ পূজিতাঃ সন্তু।’

কুষ্মাণ্ডাদি বনস্পতি দ্রব্য বলি : কুষ্মাণ্ডাদিতে সিঁদুর দিয়ে ‘বং এতস্মৈ কুষ্মাণ্ড বলয়ে নমঃ’ মন্ত্রে ৩ বার কুশোদক দিয়ে শোধন করুন এবং ‘এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ কুষ্মাণ্ড বলয়ে নমঃ’ মন্ত্রে অর্চ্চনা করে ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে ওঁ বনস্পতয়ে নমঃ’ ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ শ্রীমন্মহাকালভৈরবসহিত ক্রীংশ্রীমদ্দক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ’ মন্ত্রে পূজা করুন। এবার নিম্নলিখিত মন্ত্রে উৎসর্গ করুন। যথা- ‘বিষ্ণুরোম্ তৎসৎ অদ্য অমুকেমাসি অমুকেরাশিস্থে ভাস্করে অমুকপক্ষে অমুকতিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা (পরার্থে- অমুকগোত্রস্য অমুকস্য) শ্রীমন্মহাকাল ভৈরবসহিত শ্রীমদ্দক্ষিণকালিকা প্রীতিকামঃ ইমং কুষ্মাণ্ডবলিং বনস্পতিদৈবতং শ্রীমন্মহাকাল ভৈরবসহিত শ্ৰীমদ্দক্ষিণকালিকায়ৈ তুভ্যমহং ঘাতয়িষ্যে (পরার্থে – ঘাতয়িষ্যামি)। এইক্রমে- কদলী হলে ইমং কদলী বলিং, আখ হলে ইমমিক্ষু বলিং, আদা হলে ইমমার্দ্রক বলিং, জম্বীর হলে ইমং জম্বীর বলিং, বনস্পতিদৈবতং শ্রীমন্মহাকালভৈরবসহিত শ্রীমদ্দক্ষিণকালিকায়ৈ তুভ্যমহং ঘাতয়িষ্যে (পরার্থে – ঘাতয়িষ্যামি ) ।’

 দীপমালা উৎসর্গ : এবার দীপমালা উৎসর্গ করুন, বিশেষতঃ কাৰ্ত্তিক মাসে দীপান্বিতা অমাবস্যায় অবশ্যই দীপমালা (১০৮) উৎসর্গ করবেন। মন্ত্র, যথা- ‘বং এতস্মৈ দীপমালায়ৈ নমঃ’ বলে ৩ বার অভ্যুক্ষণ করবেন। ‘এতে গন্ধপুষ্পে দীপমালায়ৈ নমঃ’, ‘এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে ওঁ দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ’, ‘এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ ক্রীং শ্রীমৎ‍ দক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ’ মন্ত্রে দেবীর উদ্দেশ্যে গন্ধপুষ্প দিয়ে উৎসর্গ বাক্য পাঠ করুন। যথা- ‘বিষ্ণুরোম্ তৎসৎ অদ্য অমুকেমাসি অমুকেরাশিস্থে ভাস্করে অমুকপক্ষে অমুকতিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্মা (পরার্থে – অমুকগোত্রস্য অমুক দেবশর্মণঃ বা দাসস্য) শ্রীমদ্দক্ষিণকালিকা প্রীতিকামঃ অষ্টোত্তর শত সংখ্যক (কিংবা ২৮টি দীপ হলে – অষ্টবিংশতি সংখ্যক) দীপমালাঃ ওঁ ক্রীং শ্রীমদ্দক্ষিণকালিকায়ৈ তুভ্যমহং সম্প্রদদে (পরার্থে – দদানি)।

 নিরাজন (আরতি) : প্রথমে ঘৃত প্রদীপমালা (পঞ্চপ্রদীপ), তারপরে জলপূর্ণ শঙ্খ, তারপর শুদ্ধবস্ত্র (দেবীর পূজায় লালবস্ত্র), পরে বিশ্বপত্র ও পুষ্প এবং সবশেষে চামর বা ধূপ দ্বারা আরতি বা নিরাজন করতে হয়। নিরাজন করার আগে দীপমালা দেবীর সামনেস্থাপন করে অর্চ্চনা করতে হবে। অন্যান্য নিরাজন দ্রব্যের অর্চ্চনার প্রয়োজন নেই।