সিয়াচেনে পৌঁছনোই হল না পশ্চিম মেদিনীপুরের মৃত জওয়ান বাপ্পার

সিয়াচেনে পৌঁছনোই হল না পশ্চিম মেদিনীপুরের মৃত জওয়ান বাপ্পার

শুক্রবার লাদাখের তুরতুকে খাদে বাস পড়ে মৃত সাত সেনা জওয়ানের মধ্যে রয়েছেন এ রাজ্যের এক বাসিন্দাও৷ মৃত সেনা জওয়ানের বান বাপ্পা খুটিয়া (৩২)৷ তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর টাউন থানা এলাকার বারবেটিয়ার বাসিন্দা৷ গতকাল গভীর রাতেই বাপির মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছয় খড়্গপুরের বাড়িতে৷ ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া৷

গত ২৭ এপ্রিল ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন বাপ্পা৷ গুজরাত থেকে তাঁর বদলি হয় দুর্গম সিয়াচেনে৷ শুক্রবার সেনা জওয়ানদের নিয়ে সিয়াচেনে যাওয়ার পথেই নুবরায় প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায় একটি ছোট বাস৷ যে ঘটনায় প্রাণ হারান ৭ জন সেনা জওয়ান৷ আহতের সংখ্যা ১৯৷ প্রাথমিক ভাবে বাপ্পার পরিবার জানতে পেরেছে, আচমকা ধসের কারণেই সেনা জওয়ানদের বাসটি শিয়ক নদীতে গিয়ে পড়ে৷

বাপ্পার বাড়িতে তাঁর বাবা- মা ছাড়াও স্ত্রী এবং এগারো মাসের একটি শিশুকন্যা রয়েছে৷  ছেলে সিয়াচেনে পোস্টিং হওয়ার পরই আশঙ্কিত হয়ে পড়েছিল বাপ্পার পরিবার৷ যদিও বাবা, মা এবং স্ত্রীকে নিজেই আশ্বস্ত করেছিলেন বাপ্পা৷ দুঃসংবাদ শোনার পর থেকেই বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন বাপ্পার স্ত্রী৷ বাপ্পার বাবা সুকুমার খুটিয়া আরপিএফ-এর প্রাক্তন জওয়ান৷

ছেলেকে হারানোর যন্ত্রণা নিয়েই তিনি বললেন, 'দুর্গম সিয়াচেনে পোস্টিং হয়েছিল। আমরা অনেক করে বোঝালাম, কোনোভাবে ওই পোস্টিং বাতিল করানোর জন্য আবেদন করতে। কিছুতেই শুনলনা! উল্টে আমাদের বোঝালো, ভয় পেয়োনা। ভয়কে জয় করে একবার গিয়েই দেখিনা, তারপর না হয় ভাবা যাবে!' পরিবার সূত্রে খবর, ২০০৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বাপ্পা৷

তার আগেও দু' বার সেনাবাহিনীতে সুযোগ পান তিনি৷ কিন্তু মায়ের আপত্তিতে সেনায় যোগ দিতে পারেননি৷ শেষ পর্যন্ত এক রকম পরিবারের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বাপ্পা৷ মায়ের সেই আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল৷ বাপ্পার বাবা সুকুমারবাবু বলছেন, 'এর থেকে জঙ্গিদের গুলিতে ছেলের মৃত্যু হলেও মেনে নেওয়া যেত৷ কিন্তু এভাবে চলে যাওয়া মানা যায় না৷'

জানা গিয়েছে, রবিবার রাতেই বাপ্পার দেহ তাঁর খড়্গপুরের বাড়িতে এসে পৌঁছবে৷ বাপ্পার দিদি-জামাইবাবু এই মুহূর্তে উত্তর ভারতে রয়েছেন৷ তাঁরাই সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দিল্লির দিকে রওনা দিয়েছেন৷ শহরের ছেলে বাপ্পাকে শেষ বিদায় জানাতে তৈরি হচ্ছে খড়্গপুর৷