শাসকদলের বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা রতুয়া

শাসকদলের বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা রতুয়া

মালদা  বিধায়কের বিরুদ্ধে পথ অবরোধ! ফোনে সামান্য খারাপ ভাষা ব্যবহার করায় তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি! গ্রামে ঢোকার রাস্তা পাকা করার জন্য বারবার বিরক্ত করা! এত সাহস দেখানো যে ভালো নয় তার প্রমাণ পেয়েছেন বিধায়কেরই নির্বাচনি বুথ পোলিং এজেন্ট। বাড়ি থেকে বাজার যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন তিনি। পিছন থেকে মাথায় আঘাত পেয়ে লুটিয়ে পড়ে ছিলেন বাড়ির কাছেই।

প্রায় আধঘণ্টা পর বাড়ির লোকজন তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এই খবর চাউর হতেই আরও একবার শোরগোল পড়ে যায় মালদহের রতুয়া-১ ব্লকের দেবীপুর পঞ্চায়েতের বাণীকান্তটোলা গ্রামে। স্থানীয়রা রাতে আহতকে স্থানীয় রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। মাথায় সেলাই আর ব্যান্ডেজের পর প্রথমে হাসপাতালের বেডেই দীর্ঘক্ষণ নেতিয়ে পড়ে থাকেন প্রশান্ত মণ্ডল।

অবশ্য খানিক সুস্থ হতেই রতুয়া থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। যদিও এই বিষয়ে বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়কে ফোনে প্রশ্ন করা হলে সংবাদমাধ্যমকে কিছুই বলতে চাননি। এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে রতুয়া থানার পুলিশ। রতুয়া-ভালুকা রাজ্য সড়কের দুর্গাপুর থেকে বাণীকান্তটোলা গ্রামটি প্রায় এক কিলোমিটার ভিতরে।

দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি পাকা করার জন্য স্থানীয় দেবীপুর পঞ্চায়েত আর বিধায়কের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। শেষ পর্যন্ত তাঁরা গ্রামেরই প্রশান্ত মণ্ডলের দ্বারস্থ হন। কারণ, গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রশান্তবাবু ওই কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়ের বুথ পোলিং এজেন্ট ছিলেন। গ্রামবাসীদের স্বার্থে প্রশান্তবাবু বিধায়ককে ফোন করে রাস্তার আর্জি জানান।

কিন্তু রাস্তা পাকা করার আশ্বাস দেওয়া তো দূরের কথা, ফোনে অশ্রাব্য ভাষায় তাঁকে গালিগালাজ করে ফোন কেটে দেন সমরবাবু। তার অডিয়ো রেকর্ডিংও প্রশান্তবাবুর কাছে রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামের মানুষজন। পাকা রাস্তা আর দুর্ব্যবহারের জন্য বিধায়কের ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে গত বুধবারই তাঁরা দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডে পথ অবরোধ করেন।

যদিও রতুয়া থানার পুলিশ যাবতীয় আশ্বাস দিয়ে ঘণ্টাখানেক পর অবরোধ তুলে দেয়। সেদিনের অবরোধে যে ক’জন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন প্রশান্তবাবু। ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই এর ফল পেতে হয়েছে। শুক্রবার সন্ধেয় তিনি বাড়ি থেকে দুর্গাপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। বাড়ির কিছুটা দূরেই একটি আমবাগানে পিছন থেকে তাঁর মাথায় কেউ বা কারা আঘাত করে। মাথা ফেটে যায় তাঁর। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন বাগানে। সেভাবেই পড়ে থাকেন প্রায় আধঘণ্টা। এরপর বাড়ির লোকজনের নজরে পড়ে বিষয়টি।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আরও একবার শোরগোল পড়ে যায় গোটা গ্রামে। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। রাত বাড়লে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে রতুয়া জুড়ে। চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা ব্লকেই। বন্ধ হয়ে যায় ৮৫ বছর বয়সী সমর মুখোপাধ্যায়ের ফোন। তবে এতকিছুর পরেও হাল ছাড়তে নারাজ প্রশান্ত। এর শেষ দেখতে চান তিনি।