মালদায় তৃণমূলের গুণ্ডা-বাহিনীর দখল করা জমি উদ্ধার করতে নেমে নেতার মুখে আক্ষেপের সুর

মালদায় তৃণমূলের গুণ্ডা-বাহিনীর দখল করা জমি উদ্ধার করতে নেমে নেতার মুখে আক্ষেপের সুর

 তনুজ জৈন  মালদা :   বৃহস্পতিবার জমি দখল করতে নেমেছিল তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডাবাহিনী। মারধোর করা হয়েছিল বৃদ্ধ চাষীকে। খুঁটি পুঁতে দখল করে নেওয়া হয়েছিল বৃদ্ধ ও অসহায় দরিদ্র চাষের জমি। এই ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় ছুটে গেলেন মালদা জেলার  হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল দল-নেতা দ্রোণাচার্য ব্যানার্জি। এদিন তিনি তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডা বাহিনীর দখল করা জমি পুনরুদ্ধারে নামেন। দখল হয়ে যাওয়া ওই জমির খুঁটি উপরে তুলে দেন তৃণমূলের দল-নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য দ্রোণাচার্য ব্যানার্জি।

সেখানে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। তিনি আক্ষেপের সুরে জানান দলটা মাফিয়া তে ভরে গেছে। "মা মাটি মানুষের সরকার" কিন্তু এখন মাটি দখল হয়ে যাচ্ছে, মানুষ জেলে। সমাজ বিরোধীরা তৃণমূল দলটাকে কলঙ্কিত করে ফেলছে। আমরা এখানে দেখতে পেলাম এক সাধারণ দরিদ্র কৃষকের জমি এলাকারই কিছু গুন্ডা বাহিনী প্রশাসনের নাকের ডগায় দিবালোকে জমি দখল করে নিল।

এই ধরনের ঘটনা বরদাশ্ত করা যাবে না। আমাদের দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন দলের আদর্শ মা মাটি মানুষ কে ভালো রাখা নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু তার পরিবর্তে আমরা দেখতে পারছি এলাকারই কিছু দুষ্কৃতী মাফিয়া তারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। এ সমস্ত কারণে নিজেকে তৃণমূল বলতে লজ্জা করে। আমি প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।

থানার আইসি কেও ঘটনাতে নজর দিতে অনুরোধ করবো। প্রয়োজনে দলের ব্লক এবং জেলা সভাপতি ঘটনার কথা আমি জানাবো। খোদ তৃণমূলের বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলেরই দলনেতার এই ধরনের মন্তব্য ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। এমনিতেই হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকাতে অভিযোগ ছিল ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকদের মদদে এলাকায় জমি মাফিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই তৃণমূল আশ্রিত বলে অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার পিপলা গ্রামে বিহার গামী ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি জমি কে নিয়ে গণ্ডগোলের সূত্রপাত হয়। ওই এলাকায় অঞ্চল দাস বলে এক বৃদ্ধ চাষির জমি রয়েছে। এলাকার তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত জগন্নাথ সরকার নামে এক ব্যক্তি গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে ওই বৃদ্ধর জমি দখল করতে চায় বলে অভিযোগ।

এই নিয়ে ব্যাপক অশান্তি সৃষ্টি হয়। জমি দখল করতে গিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয় ওই বৃদ্ধকে। পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টে বৃদ্ধকেই গ্রেফতার করে। বৃদ্ধের পরিবারের অভিযোগ পুলিশ সম্পূর্ণ ঘটনার মদদ দিচ্ছে। ওই বৃদ্ধের জমি দখলে এলাকার তৃণমূল আশ্রিত গুণ্ডাবাহিনীর মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

যদিও জগন্নাথ সরকার ক্যামেরার সামনে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় জাতীয় সড়কের পাশে অঞ্চলের পারিবারিক জমি রয়েছে। সেখানে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী জগন্নাথ সরকার তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে জমি দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বহুদিন ধরে। ওই জমিতে বর্তমানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কিন্তু ১৪৪ ধারা ভেঙে বৃহস্পতিবার ওই জমিতে জোরপূর্বক খুঁটি পুঁতে দেয় জগন্নাথ সরকার বাহিনী। তার পরে খবর পেয়ে এলাকায় ছুটে যান তৃণমূলের পঞ্চায়েত দল-নেতা দ্রোণাচার্য ব্যানার্জি।

এরপরই তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। অঞ্চল দাসের  পরিবারের লোকের দাবি পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তিন দিন ধরে বৃদ্ধ অঞ্চল দাস কে আটকে রেখেছে থানায়। অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন অঞ্চল দাসের পরিবার। গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে। গোটা ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির চাপানউতোর। এ প্রসঙ্গে অঞ্চল দাসের ভাইপো কৌশিক দাস জানান এলাকার তৃণমূল আশ্রিত কিছু গুন্ডা বাহিনী কে সাথে নিয়ে জগন্নাথ সরকার আমাদের জমি দখল করতে এসেছিল গতকাল।

আমার কাকা বাধা দিলে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পুলিশ ওদের গ্রেপ্তার করার বদলে আমার কাকাকে গ্রেপ্তার করে উল্টে। দীর্ঘ-দিন ধরে এই জমি নিয়ে বিবাদ চলছে। জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের উপর ক্রমাগত হামলা হচ্ছে এই জমির লোভে। মাফিয়ারা জোর করে এই জমি দখল করতে চাইছে। এই ঘটনায় তীব্র কটাক্ষ করেছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।

বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক কিষান কেড়িয়া জানান রাজ্য-জুড়ে তৃণমূল আশ্রিত নেতা-কর্মীরা জমি মাফিয়ার কাজে নেমে পড়েছে। জোর করে জমি দখল করছে গরিব মানুষদের। চাষীদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। রাজ্যের প্রতিটা জেলায় তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা মাফিয়া গিরি করে বেড়াচ্ছে। মানুষ সব দেখছে। এই সরকার আর বেশি দিন নেই।

সময় আসলে মানুষ যোগ্য জবাব দেবে। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা ইংলিশ বাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানান দলের নামে কেউ অন্যায় কাজ করে বাড়াবে দল এ গুলোকে সমর্থন করে না। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ জমি মাফিয়া গিরি করলে দল বরদাস্ত করবে না। আইন আইনের পথে চলবে। আমরা প্রশাসনকে বলব এ ব্যাপারে করা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।