মালদায় কন্যাশ্রী প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা লুঠের পর্দা ফাঁস করলো অভিভাবকরা

 মালদায় কন্যাশ্রী প্রকল্প  থেকে কোটি কোটি টাকা লুঠের পর্দা ফাঁস করলো অভিভাবকরা

 তনুজ জৈন   মালদা :  ব্লকে কন্যাশ্রী প্রকল্পে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ করে কোটি টাকার বাড়ি, প্রচুর জমিজমার মালিক। মালদা জেলা হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার আব্দুল মোবিন নামে এই ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে কন্যাশ্রী প্রকল্পে ব্যাপক কাটমানি সংগ্রহের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের মেয়েদের জন্য গড়ে তোলা কন্যাশ্রী প্রকল্পে এবার বড়োসড়ো কেলেঙ্কারি সামনে এলো।

কন্যাশ্রী প্রকল্পে ব্লক স্তর থেকেই ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে টাকা লেনদেন এবং সেই টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠল ব্লকেরই এক কন্যাশ্রী প্রকল্পের ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে। কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে এসেছে। ওই ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সহ একাধিক জায়গায় অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকায়। ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে দীর্ঘদিন ধরেই হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুল এবং মাদ্রাসায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের মেয়েদের টাকা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসছিল। কখনো ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করা হচ্ছিল আবার কখনো বা স্কুলের সঙ্গে যোগসাজশ করে কন্যাশ্রী প্রকল্পের মেয়েদের কাছ থেকে কাটমানি হিসেবে ব্যাপক পরিমাণে টাকা আদায় করা হচ্ছিল।

টাকা আদায় না হলে মেয়েদের সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছিল হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের এক কন্যাশ্রী প্রকল্পে কর্মরত থাকা আবদুল মোবিন নামে এক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর । শুধু তাই নয় ওই এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্যের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সহ একাধিক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

কিন্তু প্রশাসনের তদন্ত দূরের কথা অভিযোগের ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ পর্যন্ত হয়নি। এলাকার অভিভাবক এবং স্কুলের ছাত্রীদের অভিযোগ টাকার বিনিময় ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা ব্যাপকহারে নয়-ছয় করা হচ্ছে। বঞ্চিত করা হচ্ছে এলাকার দরিদ্র ছাত্রীদের। এমনকি বিয়ে হয়ে যাওয়া স্কুলে পড়ে না এমন মেয়েদের নামেও কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে কাটমানির বিনিময়।

তারা প্রশ্ন তুলেছেন একজন ব্লকের চুক্তি ভিত্তিক কর্মী কিভাবে স্বল্পমূল্যের কাজ করে এত তাড়াতাড়ি কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি এবং অন্যান্য সম্পত্তি করতে পারে সে বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি আরো অভিযোগ হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসার কিছু কর্মী ও শিক্ষক এই অবৈধ লেনদেনে ব্লকের কন্যাশ্রী প্রকল্পের অভিযুক্ত ওই ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কে সাহায্য করছেন বলে অভিযোগ।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের সরকার থেকে পাওয়া ২৫,০০০ টাকার মধ্যে কখনো ৫০০০, কখনো ১০০০০ টাকার বিনিময় ওই অভিযুক্ত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর এই কাজ করছেন বলে অভিযোগ। রাতের অন্ধকারে টাকা ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন এলাকার অভিভাবক মহল। প্রসঙ্গত সম্প্রতি হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার তালবাংরুয়া হাই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কন্যাশ্রী প্রকল্প সহ একাধিক প্রকল্পের টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছিল। প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন ওই হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কন্যাশ্রী প্রকল্পে দুর্নীতি করার অভিযোগে মামলা পর্যন্ত হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তদন্তের নির্দেশ। ওই মাদ্রাসার অভিভাবকদের অভিযোগ এই মাদ্রাসাতে ও হেড মাস্টারের সঙ্গে মিলিত ভাবে ওই ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ব্যাপক হারে দুর্নীতি চালিয়েছে। এই মাদ্রাসার প্রচুর ছাত্রীদের নামে কন্যাশ্রী প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে।

আবার যারা এই মাদ্রাসার ছাত্রী নয় এমন কি বিবাহ হয়ে গিয়েছে এমন মহিলাদের নামে কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত কিছুদিন আগেই হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের এক গ্রুপ ডি কর্মীর বিরুদ্ধেও বন্যা ত্রাণ এর টাকার ব্যাপক নয় ছয় করার অভিযোগ উঠেছিল। ওই কর্মীর একাউন্টে বেআইনি ভাবে ৬৯ লক্ষ টাকা ঢুকানো হয়েছিল বলে অভিযোগ।

সেই খবর সামনে আসতে ওই কর্মীকে শোকজ পর্যন্ত করেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। যদিও অভিযুক্ত ওই ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আব্দুল মোবিন কে প্রশ্ন করতে যাওয়া হলে তিনি ক্যামেরার সামনে কোনো মন্তব্য করতে চাননি উল্টে সাংবাদিকদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সঙ্গে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের বিডিও বিজয় গিরি জানিয়েছেন অবিলম্বে  সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

উপযুক্ত প্রমাণ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জেলা বিজেপি রূপেশ আগারওয়াল জানান একজন ব্লকের সাধারণ চুক্তিভিত্তিক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রাতারাতি এত সম্পত্তি কি করে, করে নিয়েছে সেই বিষয়ে তদন্ত করুক প্রশাসন। তাদের অভিযোগ এই কন্যাশ্রী কাটমানি এবং টাকা নয়ছয়ের পিছনে শুধু ওই কর্মী নয় এলাকার শাসকদলের মাথারাও জড়িয়ে আছে বলে তাদের দাবি।

যদিও বিজেপির অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকার তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ যুব ব্লক সভাপতি মনোতোষ ঘোষ বলেন বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। ওই ব্লকে কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়ে যদি কোনো বেনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে আইন আইনের পথে চলবে। দল কোন দুর্নীতিকে বরদাস্ত করে না। তবে এই ব্যাপারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি যা অভিযোগ তুলছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।