অমানবিক দৃশ্য মালদায়, বাথরুমের জল খাচ্ছেন বন্দিরা

অমানবিক দৃশ্য  মালদায়, বাথরুমের জল খাচ্ছেন বন্দিরা

তীব্র গরমে বাথরুমের জল খাচ্ছেন বন্দিরা। এমনই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে মালদহ জেলা সংশোধনাগারে। জলকষ্টের ছবি ধরা পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। তবে মালদহের জেলে যে ছবি ধরা পড়েছে, তা কার্যত অমানবিক বলেই উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন মহলে। শুধুমাত্র জলই নয় ওই জেলের বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক অভিযোগ।

খাবারের মান, থাকার জায়গা, সবকিছু নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বন্দিদের আত্মীয়রা। সরব হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরাও। তদন্তসাপেক্ষে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই দাবিই উঠেছে। এক বন্দির মা এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের কাছে। বন্দিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরাও। সোমা মজুমদার নামে ওই অভিযোগকারী মালদহের গয়েশপুর কালীবাড়ি কলোনির বাসিন্দা। গত ২৩ এপ্রিল থেকে ছেলে জেলা সংশোধনাগারেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সোমবার তিনি তাঁর ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁর ছেলে তাঁকে জানিয়েছেন, এই গরমে জেলে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই।

বাথরুমের জল খেতে হচ্ছে। খাবারের মানও খুব খারাপ। পিঁপড়ের মধ্যে সংশোধনাগারের মেঝেতে ঘুমোতে হচ্ছে তাঁকে। সোমা মজুমদার বলেন, "আমার ছেলে বলে নয়, সংশোধনাগারে বন্দিদের বাথরুমের জল কেন খেতে হবে? জেলে বন্দিদের মানবাধিকার কেন লঙ্ঘিত হবে? বন্দিরাও তো মানুষ! আমি এনিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।"

এই প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা মঞ্চের তরফে জিষ্ণু রায়চৌধুরী বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই সংশোধনাগার নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। ফের অভিযোগ উঠেছে, বন্দিদের নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। বাথরুমের জল পান করতে হচ্ছে। সেলে বন্দিদের জন্য পানীয় জলের কোনও পাত্র রাখা হয়নি।

অথচ সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, প্রতিটি জেলের সেলে পানীয় জলের পাত্র রাখতেই হবে। সেলগুলিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দিদের রাখা হয়। আর জেলকর্মীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তো রয়েছেই। আমার দাবি, প্রতিটি সংশোধনাগারের সীমানা এবং ঘরের সংখ্যা বাড়ানো হোক। প্রতিটি বন্দির সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হোক।"

মালদহ জেলা আদালতের আইনজীবী তথা মানবাধিকার সংগঠন গৌড়বঙ্গ হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ারনেস সেন্টারের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দাসও বলেন, "শুধু মালদহ নয়, গোটা রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিতে গাফিলতি রয়েছে।

তাই মাঝেমধ্যেই মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। সংশোধনাগারগুলিতে খাবার, পানীয় জল, ওষুধপত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবের কথা শোনা যায়। এসব সমস্যা সমাধানে প্রশাসন, সরকার, এমনকি বিচার বিভাগেরও দায়িত্ব রয়েছে। আশা করি, মালদহ জেলা সংশোধনাগারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তদন্তসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।"