বহরমপুর গার্লস কলেজের হোস্টেলের গলি এখন অভিশপ্ত

বহরমপুর গার্লস কলেজের হোস্টেলের গলি এখন অভিশপ্ত

হোস্টেলের সামনের অংশটা একটা বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কী! বিকাল পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলে। সন্ধ্যার পর হোস্টেলের সামনের গলির মুখে তো কোনও টোটো-রিক্সাচালকই পা মাড়ান না। হোস্টেলের বাইরে এখনও একটা ছমছমে ভাব। রক্ত জলে ধুয়েছে আগেই। কিন্তু আতঙ্কের ছাপ ছেড়ে গিয়েছে আবাসিকদের মনে।

রাস্তার যে জায়গায় সুতপার ক্ষতবিক্ষত শরীরটা পড়েছিল, সেটা যে কোনওভাবে এড়িয়ে চলতে চাইছেন বাসিন্দারা, হোস্টেলের আবাসিকরা। কিছু একটা অশনি আতঙ্ক যেন তাড়া করে ফিরছে তাঁদের। ঈদের ছুটির পর এখনও পর্যন্ত মাত্র তিরিশ জন এসেছেন হোস্টেলে। যেখানে বহরমপুর গার্লস কলেজের হোস্টেলে আবাসিকের সংখ্যা ২৫০। এই হোস্টেলেই থাকতেন সুতপা চৌধুরী।

গত সপ্তাহে তাঁকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে ‘খুন’ করেছেন তাঁর প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরী। সুশান্ত এখন হাজতে, কিন্তু যে নৃশংসতার ছাপ সে ছেড়ে গিয়েছে, তাতে কাঁটা হয়ে রয়েছেন সুতপার বান্ধবীরা। হোস্টেলের এক আবাসিক বলেন, “একটা গা ছমছমে ভাব তো কাজ করছেই। রাত হলে হোস্টেলের বাইরে পা রাখতে ভয় লাগছে। বারবার ওই দিকেই চোখ চলে যাচ্ছে, যেখানে সুতপাকে মারা হয়েছে।

একটা অভিশপ্ত জায়গা। বুকটা ছ্যাঁত্‍ করে উঠছে বারবার।” সুতপা দাস নামে এক আবাসিক বলেন, “এখনও তো হোস্টেলের সবাই আসেনি। ভয়ে আসতে চাইছে না অনেকে। মোটে ৩০ জন এসেছি আমরা। একটা বাঁশের ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কীভাবে বিপদ রোখা সম্ভব? যে কোনও মুহূর্তেই কারোর ইচ্ছা হলে, সে হামলা করতে পারে। পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হলে ভাল হত।”

আরেক আবাসিক ছাত্রী বলেন, “হোস্টেলের ভিতরে তো গার্ডকাকুরা রয়েছে। ভয় নেই। বাইরে বেরোলেই মনে হচ্ছে, কেউ ফলো করছে পিছন থেকে। শরীরের ভিতর কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে।” এক অভিভাবক বললেন, “মেয়েকে তো বুঝিয়েও আনতে পারছিলাম না। ভয় পাচ্ছে। টিউশন রয়েছে বলে আনতে হল। নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার।”

কেবল হোস্টেলের আবাসিক বললে ভুল হবে, ওই গলির মধ্যে যে বাড়িগুলি রয়েছে, তার বাসিন্দারাদের যেন কোনও এক আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে। সন্ধ্যা হলেই নিঝুম রাস্তা। টোটো-অটো-রিক্সাচালক কেউই আরও ওই গলিতে ঢুকতে নারাজ। সংকীর্ণ গলির মুখ বহন করে চলেছে সেই নৃশংসতার ছাপকে। গত সোমবার এই গলিতেই খুন হয়েছিল বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সুতপা। তাঁর প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরী আপাতত পুলিশি হেফাজতে।