মালদহে বিধায়কের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে দল ছাড়লেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি

মালদহে বিধায়কের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে দল ছাড়লেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি

তনুজ জৈন  মালদা  :    দুর্নীতিতে ভরে গেছে দল। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কোন দলীয় শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা নেই। টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে পদ। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে দল ছাড়লেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এবং জেলা সভাপতিকে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দল ছাড়লেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম।

পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বাজার আগে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির দলত্যাগ নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। তীব্র কটাক্ষ বিজেপির। কিছুদিন আগেই হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের ব্লক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বেসুরো হয়েছিলেন তুলসীহাটার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। বিধায়ক নিহররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন টাকার বিনিময়ে দলীয় পদ দেওয়ার। জল্পনা শুরু হয়েছিল হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই দল ছাড়বেন তিনি।

অবশেষে সেই জল্পনা সত্যি হলো। সোশ্যাল মিডিয়াতে একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে পোস্ট করে এবং তৃণমূলের মালদা জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সিকে স্পিড পোস্ট মারফত পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দল ছাড়লেন মনোজ রাম। তার অভিযোগ তৃণমূলের মধ্যে কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। রাজ্য স্তর থেকে শুরু করে বুথ স্তর পর্যন্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। দলীয় স্বার্থের থেকে প্রাধান্য পায় বেশি ব্যক্তি স্বার্থ।

সাথে দলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। কেউ কোন দলীয় অনুশাসন মেনে চলে না। এমনকি এলাকার বিধায়ক মোটা টাকার বিনিময়ে সাংগঠনিক পদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। জেলা সভাপতিকে পাঠানো পদত্যাগ পত্রতেও তিনি সমস্ত অভিযোগের কথা উল্লেখ করেছেন। নিজের এলাকার দলীয় কার্যালয় থেকে তৃণমূলের পতাকা এবং ফ্লেস্ক সড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে ওটা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে বলেছেন চাঁচল বিধানসভার বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ।পাল্টা তিনি তোপ দেগেছেন মনোজ রাম কে।

সমগ্র ঘটনায় শুরু হয়েছে তীব্র চাপানোতোর। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে তৃণমূল বলে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। সাথে দলত্যাগী তৃণমূল নেতা বিজেপিতে এলে স্বাগত বলে জানিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও এই সমগ্র ঘটনাকে আমল দিতে চাইছে না ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। এদিকে মনোজ রামের ক্রমশাই অন্য দলে যাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। যদিও তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়েছেন আপাতত তিনি কোন দলে যাচ্ছেন না।

দলত্যাগী তৃণমূল নেতা মনোজ রাম বলেন, দলের মধ্যে কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা বা দলীয় অনুশাসন নেই। রাজ্য স্তর থেকে পর্যন্ত দুর্নীতি এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। উচ্চ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানালে কোন সুরাহা হয় না। বিধায়ক টাকার বিনিময়ে পদ বন্টন করেছে। দলকে সকলে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করছে। তাই অত্যন্ত রাগ ক্ষোভ এবং দুঃখের সঙ্গে এই দল ছাড়লাম।

বিধায়ক নীহার রঞ্জন ঘোষ বলেন," কে দলে থাকবে বা থাকবে না সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তিনি কেন দল ছেড়েছেন বলতে পারব না। উচ্চ নেতৃত্ব ব্যাপারটা দেখবে। তবে পঞ্চায়েত ভোটে এর কোন প্রভাব পড়বে না। হরিশচরন্দ্রপুর তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা বলেন,তৃণমূল যারা ছাড়ে তারা পাগল। অনেক বড়ো বড়ো বিধায়ক, মন্ত্রী দল ছেড়ে তারপর নেত্রীর পায়ে ধরে দলে এসেছে।

বিজেপি আমাদের দল ভেঙে কিছু করতে পারে নি। আগাছা পরিষ্কার হলে ভালো। বিজেপির উত্তর মালদা জেলা সম্পাদক রুপেশ আগরওয়াল বলেন, উনি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্মান পান নি তাই দলের প্রতি অনীহা প্রকাশ করেছেন। তৃণমূলে অনেকেই নতুন এসে টাকা দিয়ে পদ পেয়েছে। অনেকেই এই ভাবে দল ছাড়বে। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।

আর কয়েক মাস পরেই পঞ্চায়েত ভোট। আর তার আগে অঞ্চল সভাপতির একাধিক অভিযোগ তুলে দলত্যাগ স্বাভাবিক ভাবে প্রভাব ফেলবে শাসক শিবীরে। মুখে না বললেও এই ঘটনায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মনোজ রাম রাজনীতি থেকে সরে যাবেন নাকি অন্য কোন দলে যোগ দেবেন সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে।