দিল্লিতে কাজ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার শিলিগুড়ির মহিলা

দিল্লিতে কাজ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার শিলিগুড়ির মহিলা

মারের চোটে প্রস্রাব করতে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না তাঁর। নিজের প্রস্রাবে ডুবেই শুয়ে ছিলেন। কেটে দেওয়া হয়েছিল তাঁর চুলও। একটু বেশি রোজগারের আশায় দিল্লিতে গৃহ পরিচারিকার কাজ করতে গিয়ে ভয়ানক নির্যাতনের শিকার হলেন শিলিগুড়ির এক মহিলার। বৃহস্পতিবার, দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ৪৮ বছরের ওই মহিলা কাজ করতেন পশ্চিম দিল্লির রাজৌরি গার্ডেন এলাকার এক দম্পতির বাড়িতে।

তারাই ওই মহিলাকে বেশ কয়েক মাস ধরে যারপরনাই নিগ্রহ করেছে। গত রবিবার নির্যাতন মাত্রা ছাড়ায়। আপাতত দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ওই মহিলার চিকিত্‍সা চলছে। খবর দেওয়া হয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও। অভিযুক্ত দম্পতির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ, তাদের আটক করার চেষ্টা চলছে। জানা গিয়েছে এই ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।

এক প্লেসমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে পশ্চিম দিল্লিতে অভিনীত নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজ পেয়েছিলেন শিলিগুড়ির ওই মহিলা। মাসিক বেতন ছিল ৭০০০ টাকা। পুলিশ জানিয়েছে তাঁর নাম রজনী। প্রথম থেকেই অভিনীত এবং তার স্ত্রী তাঁকে মারধর করত বলে অভিযোগ রজনীর। গত রবিবার পরিস্থিতি চরমে ওঠে। রজনীর অভিযোগ, চুলে মুঠি ধরে তাঁকে টেনে হিঁচড়ে ঘরের বাইরে এনেছিল ওই দম্পতি।

তারপর তাঁর চুল কেটে দেওয়া হয়েছিল। মারের চোটে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন শিলিগুড়ির ওই মহিলা। প্লেসমেন্ট এজেন্সিটির মালিক জানিয়েছেন, গত রবিবার গভীর রাতে আচমকা ওই দম্পতির ফোন এসেছিল। তারা দাবি করে, রজনী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। এরপর, রাতেই ওই দম্পতি প্লেসমেন্ট এজেন্সির অফিসের বাইরে রজনীকে ফেলে চলে যায়।

পরে, এজেন্সির মালিক অফিসে এসে রজনীকে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। নিজেরই প্রস্রাবে ভিজে গিয়েছিল তাঁর দেহ। এজেন্সির মালিক তাঁকে সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। হাসপাতালের পক্ষ থেকেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে, হাসপাতালে গিয়ে রজনীর অভিযোগ নথিবদ্ধ করে পুলিশ।

দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (পশ্চিম) ঘনশ্যাম বনসল বলেছেন, ‘গত ১৭ মে সফদরজং হাসপাতাল থেকে একজন মহিলার মেডিকো-লিগ্যাল কেস সংক্রান্ত তথ্য এসেছিল। মেডিকো-লিগ্যাল কেস অনুসারে, রোগীর ভর্তির সময়ে তাঁর শরীরে, তাঁর নিয়োগকর্তাদের শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।’ অভিযুক্ত দম্পতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় আঘাত করা, অন্যায়ভাবে আটকে রাখা এবং নিগ্রহ করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

সফদরজং হাসপাতালের মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে ভর্তির সময়ে, রজনীর শরীরে ‘দৈহিক আক্রমণ’এর চিহ্ন ছিল। তাঁর ‘মাথায় আঘাত লেগেছিল’ এবং তিনি ‘বমি করছিলেন’। তাঁর চোখে, মুখে, হাত-পা’য়ে, তলপেটে এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও আঘাত রয়েছে। তবে, ঠিক কেন রজনীকে এমনভাবে নিগ্রহ করত অভিনীত এবং তার স্ত্রী – সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।

প্লেসমেন্ট এজেন্সির মালিক জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধর যোগাযোগ রয়েছে ওই দম্পতির। রজনীর আগে, তাঁদের এজেন্সি থেকেই আরও এক মহিলাকে হ পরিচারিকার কাজে নিয়োগ করেছিল তারা। পরে, ওই মহিলার বিরুদ্ধে চুরি করা এবং তাদের খাবারে বিষ মিশিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করে তাঁকে ছাটাই করে দিয়েছিল।