পূর্ব বর্ধমানে স্ত্রীকে হত্যার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ স্বামীর

পূর্ব বর্ধমানে স্ত্রীকে হত্যার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ স্বামীর

নৈশকালীন ডিউটি চলাকালীন পুলিশের টহলদারি ভ্যান এসে দাঁড়ায় সড়কপথের মোড়ের কাছে। পুলিশ কর্মীরা গাড়ি থেকে সবে নেমেছেন। সেসময় সাইকেল চড়ে আসা এক ব্যক্তি সটান কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকের পা জড়িয়ে ধরেন। বলেন, “স্যর আমি আমার বউকে খুন করে এসেছি। বডিটা এখনও ঘরেই পড়ে রয়েছে।” পুলিশ আধিকারিক কার্যত হতভম্ব হয়ে যান। তারপর সেখান থেকেই থানার ওসিকে ফোন করে জানান।

ওসি নির্দেশ দেন ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল দেখে আসার। পুলিশের গাড়িতেই আগন্তুককে চাপিয়ে তার কথামতো নিয়ে যাওয়া হল ঘটনাস্থলে। সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায় গৃহবধূর রক্তাক্ত দেহ।  রবিবার ভোরে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার (Bhatar) থানার পানোয়া গ্রামে ঘর থেকে মমতাজ খাতুন (২৯) নামে এক গৃহবধূকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

ভাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে জানান। ওই ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিহত বধূর স্বামী শেখ রহমতকে। ভাতার থানার ওসি অরুণ কুমার সোম জানান, ধৃত ব্যক্তি তার স্ত্রীকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় পুলিশ একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।  ভাতারের পানোয়া গ্রামের মাঝেরপাড়ায় বাপেরবাড়ি নিহত বধূ মমতাজ খাতুনের। প্রায় ১৩ বছর আগে কাটোয়ার গাঙ্গুলিডাঙা গ্রামের বাসিন্দা শেখ রহমতের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর।

দুই কন্যাসন্তানও রয়েছে তাঁর। বড় মেয়ে আসমার বয়স ৯ বছর। ছোট মেয়ে সানিয়া ৫ বছরের। পেশায় রাজমিস্ত্রি শেখ রহমত। বিয়ের বছরখানেকের মধ্যেই গাঙ্গুলিডাঙা ছেড়ে শ্বশুরবাড়ির গ্রামে বসবাস শুরু করে। শ্বশুর শেখ মোমিন তার বাড়ির পাশেই মেয়ে জামাইয়ের বসবাসের জন্য জায়গা দেন। সেখানে ঘরও করে দেওয়া হয়। শেখ মোমিন জানান, “মেয়ের সঙ্গে জামাইয়ের মাঝেমধ্যে বাড়ির কাজকর্ম নিয়ে ছোটখাটো অশান্তি হত।

আবার মিটেও যেত। তাই স্বামী-স্ত্রীর অশান্তিতে নাক গলাতাম না। কিন্তু এভাবে খুন করতে পারে স্বপ্নেও ভাবিনি।” পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পানোয়া গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে আলিনগর চৌরাস্তার মোড়ের কাছে রবিবার কাকভোরে পুলিশের টহলদারি ভ্যানটি দাঁড়িয়েছিল। গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক ও কর্মীরা।

তখনও শেখ রহমত নামে ওই ব্যক্তি সাইকেল চড়ে ভাতার বাজারের দিকে আসছিল। পুলিশ দেখে দাড়িয়ে পড়ে।তারপর পুলিশ আধিকারিকের পা জড়িয়ে ধরে। প্রাথমিক জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, স্ত্রী মমতাজ খাতুন ও দুই মেয়ে যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শেখ রহমত প্রথমে স্ত্রীর গলায় ওড়না জড়িয়ে ফাঁস দিয়ে সজোরে চেপে ধরে। মমতাজ নেতিয়ে পড়ে।

তার মাথায় একটি শাবল দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে শেখ রহমত। এমনকি শাবল দিয়ে আঘাত করার আগে মমতাজের মাথায় একটি উলের পোশাক জড়িয়ে দেয় রহমত। যাতে রক্ত ছিটকে গায়ে না লাগতে পারে। কিন্তু কেন স্ত্রীকে এমন নৃশংসভাবে খুন করল সে? এর উত্তরে ধৃত পুলিশের কাছে জানায়, “সময়ে রান্না করত না। আমাকে কাজ করে বাড়িতে গিয়ে প্রায়দিনই রান্না করতে হত।

কোনও দায়িত্বপালন করত না।” তবে নিহতের প্রতিবেশীরা জানান, শেখ রহমতের লটারির টিকিট কাটা নেশা ছিল। বাজারে বহু টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছিল। মমতাজের নামে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া হয়েছিল। মৃতার বাপের বাড়ির সন্দেহ, ব্যাংক ঋণের সময় গ্রাহকের বিমা করা থাকে। বিমার টাকার জন্যই মমতাজকে পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, খুনের কারণ নিয়ে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।