কট্টর মুসলমান অবস্থান বিরোধী দলের জয় নেদারল্যান্ডে

কট্টর মুসলমান অবস্থান বিরোধী দলের জয় নেদারল্যান্ডে

এক সময় নবী মহম্মদ বিতর্কে সমর্থন করেছিলেন বহিষ্কৃত বিজেপি নেত্রী নুপুর শর্মাকে, নেদারল্যান্ডের সংসদ নির্বাচনে বিপুল জয় পেলেন সেই  ডানপন্থী ডাচ নেতা গির্ট ওয়াইল্ডার্স। ওয়াইল্ডার্স বরাবরই তাঁর ইসলাম বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত। শুধু তাই নয় অভিবাসনের বিরুদ্ধেও নানা অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। নেদারল্যান্ডসে অভিবাসন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। নেদারল্যান্ডসের চলতি নির্বাচনে সেই ওয়াইল্ডার্সের ফ্রিডম পার্টি (পিভিভি)-ই জয়ের নিকাড়ায় দাঁড়িয়ে।

উল্লেখ্য গত বছর একটি টিভি শো-তে নবী মোহাম্মদ সম্পর্কে বহিষ্কৃত বিজেপি নেত্রী নুপুর শর্মার মন্তব্য ঘিরে প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় ওয়াইল্ডার্স-এর নুপুর শর্মার পক্ষ নেওয়ায় বিশ্ব রাজনীতিতে যথেষ্ট সমালোচনার পাত্র হতে হয়েছিল। রাজস্থানের উদয়পুরে দুই মুসলিম পুরুষের হাতে এক দর্জিকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে নবী মহম্মদ সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছিলেন নুপুর শর্মা।

সেই সময় একটি বিশিষ্ট সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাতকারে ওয়াইল্ডার্স নুপুর শর্মার মন্তব্য নিয়ে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-এর প্রকাশিত বিবৃতির চরম সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর কথায়,'আমি বলব ভারত বা অন্য কোন দেশ সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে আয়নায় দেখুন। ওআইসি মানবাধিকার সম্পর্কে একটি ঘোষণা প্রকাশ করেছে এবং এই সমস্ত দেশ ভারতকে আক্রমণ করছে। তারা শরিয়া আইনকে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ঊর্ধ্বে রেখেছে।' 

নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মুসলমানদের বিপক্ষে কট্টর অবস্থান নেওয়া দলের জয়ের পর সে দেশের মুসলিমদের মনে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দলের নেতা গির্ট উইল্ডারস সুর নরম করলেও তাঁর নেতৃত্বে সম্ভাব্য জোট সরকারের নীতি নিয়ে তাঁদের মনে সংশয় রয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চরম দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তির নির্বাচনী সাফল্য, বিশেষ করে মুসলিমদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। এবার নেদারল্যান্ডসের সংসদ নির্বাচনে গির্ট উইল্ডারসের ফ্রিডম পার্টির অভাবনীয় জয় পায়।

তাঁর দলের এই জয় বিশেষ করে মুসলমানদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।  নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্টের ১৫০টি আসনের মধ্যে ৩৭টি দখল করে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে চরম দক্ষিণপন্থী ফ্রিডম পার্টি। তবে সরাসরি ক্ষমতায় আসতে হলে গির্ট উইল্ডারসকে অন্য দলের সঙ্গে জোট করে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। কোনো আইন প্রণয়ন করতে গেলেও জোটসঙ্গীদের সম্মতির প্রয়োজন হবে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে জয়ের পর গির্ট উইল্ডারস সুর নরম করে বলেন, তিনি গোটা দেশের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হতে চান।

ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের সম্পর্কে গির্ট উইল্ডারসের খোলাখুলি বিরূপ মন্তব্য নেদারল্যান্ডসের রাজনীতিতে বারবার আলোচনায় এসেছে। তিনি অতীতে নেদারল্যান্ডসে মসজিদ ও পবিত্র কোরআন নিষিদ্ধ করার ডাক দিয়েছেন। ফলে নির্বাচনে এমন ব্যক্তির প্রতি বিপুল জনসমর্থন নেদারল্যান্ডসের মুসলিমদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।  নেদারল্যান্ডসের সিএমও নামের মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ডাচ মুসলমানদের জন্য নির্বাচনের এই ফলাফল অত্যন্ত মর্মান্তিক।

তাঁর মতে, আইনের শাসনের মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি স্থির করে কোনো দল যে এত সাফল্য পেতে পারে, তা প্রত্যাশার বাইরে ছিল। নেদারল্যান্ডসের জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ মুসলিম। গির্ট উইল্ডারস ক্ষমতায় এলে তাদের অনেকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিরিয়া থেকে আসা ছাত্রী জুডি কারাজোলি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে নিজের উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, গির্ট উইল্ডারসের   পিভিভি দল খোলাখুলিভাবে দেশ থেকে ইসলাম ধর্ম দূর করার ঘোষণা দিয়েছেন।

কারজোলি বলেন, এমনকি গির্ট উইল্ডারসের ফ্রিডম পার্টির ইশতেহারে দাবি করা হয়েছে, সিরিয়ার কিছু অংশ বর্তমানে নিরাপদ থাকায় সেখান থেকে আশা শরণার্থীদের নেদারল্যান্ডসে বসবাসের অনুমতি বাতিল করে ফেরত পাঠানো উচিত। কারজোলি শুধু নিজের নন, তাঁর সিরীয় বন্ধুদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। নেদারল্যান্ডসের দলীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এমন ফলাফল অবশ্য সবার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের শাসনকাল সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেক মানুষ মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোর বিকল্পের খোঁজ করছিলেন। গির্ট উইল্ডারসের দলের সাফল্যের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের কিছু কিছু জায়গায় মুসলমানদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা গেছে। উটরেখট শহরে প্রায় এক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বামপন্থী ও মুসলমানদের দলগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত এসব সমাবেশে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রামের অঙ্গীকার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমস্টারডাম শহরেও ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।