সিনেপাড়ায় কালো টাকা বিনিয়োগ নিয়ে সরব কমলেশ্বর

সিনেপাড়ায় কালো টাকা বিনিয়োগ নিয়ে সরব কমলেশ্বর

জয়িতা চন্দ্র ‘একটু সরে বসুন’—নাহ, এই সরে বসা মানে কেবলই যে দূরত্ব বেড়ে যাওয়া তা নয়, এই সরে বসা মানে, কখনও-কখনও অপর ব্যক্তিকে খানিকটা বসার জায়গা করে দেওয়াও বটে। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবি ঠিক কোন সুরে কথা বলছে?  কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় আক্ষেপের সুরে বললেন, ”আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা যা দেখছি, একটা প্রতিযোগিতামূলক, একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যেখানে দেখা যায় হয়তো একটা চেয়ার রয়েছে, সেখানে অনেক মানুষের লক্ষ্য,

সবাই ঠেলাঠেলি করে সেখানে বসার চেষ্টা করছে। এটা জীবনের সবক্ষেত্রেও দেখা যায়। বাসে-ট্রামে ট্রেনে তো দেখছি, পাশাপাশি অফিস-কাছারি থেকে শুরু করে ব্যবসার দুনিয়ায়, এমনকি ছবির জগত থেকে নাট্যদল সবক্ষেত্রেই চোখে পড়ে। এখানেই একজন নবাগত এলে, সে স্বাভাবিকভাবেই জায়গা পাচ্ছে না, তখন সে বলছে ‘একটু সরে বসুন, তাহলে আমারও একটু জায়গা হয়’।” ছবির বিশাল স্টারকাস্ট, সবাইকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসাটা তো বেশ চ্যালেঞ্জ… দেখুন বড় কাস্ট নিয়ে আমি আগেও ছবি করেছি, তখন যে খুব একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি তেমনটা নয়।

তবে এটা ঠিক যে,  অনেক স্টার নিয়ে কাজ করলে সেই দিকটায় বেশি নজর দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সেটা সবক্ষেত্রেই রাখার চেষ্টা করছি। তবে যাঁরা এই ছবিতে রয়েছেন, তাঁরা অনেকদিনের চেনা, বন্ধুবান্ধব। অনেকের সঙ্গে কাজও করেছি আগে। এই মজার চিত্রনাট্যকে প্রাণ দিতে যা প্রয়োজন, তা হল ভাল অভিনেতা। আমি মূলত সেটাই দেখেছি। কারণ ভাল অভিনেতা না হলে কমেডি সৃষ্টি হয় না। যখন কাস্ট বেশি, তখন চিত্রনাট্যে তাঁদের ব্যালান্সটা বজায় রাখাটা জরুরি। ‘একটু সরে বসুন’ ছবির ক্ষেত্রে এটা কতটা হচ্ছে?

এর রায় দর্শক দেবেন। আমরা তো সাধ্য মতো চেষ্টা করে গিয়েছি। দর্শকই বলতে পারবেন আমরা তাঁদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছি কি না? তবে এই কাস্ট নিয়ে আমাদের কাজ করতে কোনও সমস্যা হয়নি, এই টিমটা নিয়ে আমরা খুব গর্বিত। বাংলায় কমেডি জ্যঁর কী হারিয়ে যাচ্ছে? ‘কাজ হচ্ছে না’ বলব না, হয়েছে বেশ কয়েকটা। তবে আগে বাংলায় কমেডি জ্যঁর ভীষণ কমন ছিল। এবং সেটা এমনই বিশাল স্টারকাস্ট নিয়েই হতো। সেটার প্রভাব তো রয়েছে। আমি নিজে কমেডি ভীষণ পছন্দ করি, কিন্তু আজ পর্যন্ত কখনও করা হয়নি।

এবার করতে পেরেছি কারণ স্ক্রিপ্ট ছিল, প্রযোজকরা তাতে রাজি ছিলেন। এই কাস্টদের আমি পেয়েছি। এই মণিকাঞ্চন যোগটা হয়েছে বলেই একটু সরে বসুন সম্ভব হল। সাম্প্রতিক বেশিরভাগ কমেডি ছবি মানেই সম্পর্ক, প্রেমের গল্পে সুড়সুড়ি দেওয়া হাসি অথবা দক্ষিণের কপি… টলিউড কি সাহস হারাচ্ছে? সাহসের অভাব ঘটছে না বলেই আমার বিশ্বাস, কারণ আমাদের এখানে ট্যালেন্ট প্রচুর আছে। তবে আমার যেটা মনে হয় প্রযোজনার ক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি বিনিয়োগ দরকার। বিনিয়োগ থাকলে, আরও নানা ধরনের ছবি তৈরি হবে।

অন্তত চেষ্টাটুকু করা যায়। তবে অনেকেই কিন্তু এই চেষ্টাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো অনেকক্ষেত্রে ওই মণিকাঞ্চন যোগটা হয়ে উঠছে না। তবে একটা কথা আমি মনে করি যে, সারাদিন হাসেননি এমন মানুষ তো হয় না। কোনও না কোনও সময় তিনি হেসে ফেলেছেনই, আমার বিশ্বাস। তাই কমেডি এমন এক অস্ত্র, যার সঠিক কোপে মানুষ হাসতেই থাকবেন, হাসতেই থাকবেন। আর ঠিক এই কারণেই আমরা রম্যরচনা বলি, কমেডি ছবি বলি, এগুলোকে বারবার উপভোগ করি। তাই বাঙালি দর্শকদের পাতে সঠিক কমেডি পরিবেশন করলে তাঁরা ভালবেসেই তা গ্রহণ করবেন বলে আমার মত।

আপনি বিনিয়োগের কথা বললেন, কিন্তু এই বিনিয়োগ তো এখন সাদা-কালোয় ভাগ। সুযোগ থাকলেও তো অনেককে তাই পিছিয়েও আসতে হয়? একটা জিনিস আছে, ছবির জগতে যে বিনিয়োগ, সেই টাকার উৎস কী, সেটা কিন্তু পরিচালক কিংবা কলাকুশলীরা জানতেও পারেন না। কখনও-কখনও দেখা যায় সেই টাকার পিছনে অন্য গল্প রয়েছে, এটা মাপার জন্য কিন্তু কোনও মাপকাঠি নেই। আমাদের পক্ষে মোটেও বোঝা সম্ভবপর নয় যে, কী ধরনের টাকা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক।

এটা আগেও ছিল। ছিল না যে, তা কিন্তু নয়। তবে এখন যেন ব্যাপারটা আরও বেড়ে গিয়েছে। আমি জানি না কেন, যাঁরা দুর্নীতিতে জড়িত অথবা দুর্নীতিতে আশ্রিত, তাঁদের সঙ্গে সিনেমার এক গভীর প্রেম। এই দুর্নীতির কারণে অনেক শিল্পই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, ছবি যেহেতু একটা জনপ্রিয় ইন্ডাস্ট্রি, ছবির জগত সম্পর্কে যেহেতু মানুষ বেশি খোঁজ খবর নেয়, সেই কারণেই এখন বিষয়গুলো সকলের চোখে পড়ছে। তবে এখানে সত্যিই আমাদের কিছু করার নেই, আইনব্যবস্থা, প্রশাসন, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা… এটা তাদের ভাবার বিষয়।